ঈশ্বরদী-পাবনা পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু
পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি অবশেষে পূরণ হতে যাচ্ছে। ঈশ্বরদী থেকে পাবনা অভিমুখী নবনির্মিত রেলপথ দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে।
এরপর ট্রেনটি নবনির্মিত মাঝগ্রাম স্টেশন হয়ে পাবনা রেলস্টেশনে পৌঁছে। ট্রেনটি আবার দুপুর সাড়ে ১২টায় পাবনা থেকে ঈশ্বরদীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এ সময় ট্রেনে রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ট্রায়াল ট্রেনের ইঞ্জিনটি নানা রঙে সজ্জিত করা হয়। মাঝগ্রাম, দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া ও পাবনা স্টেশনে পৌঁছালে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ট্রেনটি দেখার জন্য ভিড় করে।
রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা শওকত জামিল মহসি জানান, ট্রেনটি ৩০ সদস্যের একটি টিম নিয়ে পরীক্ষামূলক চলাচল করেছে। ১০০ কিলোমিটার বেগে চলে ট্রেনটি পাবনা পৌঁছঅতে সময় নেয় ৪০ মিনিট। এর মধ্যে চারটি স্টেশনে থামানো হয়। এ মাসের শেষে রাজশাহী থেকে পাবনা পর্যন্ত একটি কমিউটার ট্রেন চলাচল শুরু করবে।
ট্রেনটি পাবনা স্টেশনে পৌঁছালে জেলা প্রশাসক রেখা রানী বালো ও পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারফ হোসেন ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সুবক্তগীন জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ঢালারচর পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কম খরচে পাবনাবাসী যাতায়াত করতে পারবেন। এতে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষের চলাচল সহজ হবে।
বিভাগীয় পাকশী রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, পাবনা জেলার ১১টি থানার মধ্যে তিনটি থানার অল্প সংখ্যক মানুষ রেলপথ সুবিধা পেলেও জেলার মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। এই রেলপথ নির্মাণের দাবি ছিল পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের। সেই অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা যায়, পাবনার মানুষের ১০০ বছরের দাবি ছিল এই রেলপথ। ১৯১৪ সালে পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ করা হলে সেই সময়ে দাবি ওঠে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা পর্যন্ত একটি লিংক রোড রেললাইনের। সেই সময় ব্রিটিশরা এই দাবি পূরণে প্রতিশ্রুতিও দেয়। তবে সেই প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবায়ন হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের রেল বিভাগের মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর উদ্যোগে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ প্রকল্প কাজ শুরু করে। সে সময় পাবনায় নদীকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠলে স্থলপথে যাতায়াত ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী করতে ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে নগরবাড়ি পর্যন্ত রেলপথের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর প্রকল্পটির কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীকালে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে পাবনা শহরের টাউন হল মুক্তমঞ্চ মাঠে এক ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেন আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পাবনাবাসীর প্রাণের দাবি এ রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সময় নকশার কিছুটা পরিবর্তন এনে রেলপথটি ঈশ্বরদী থেকে পাবনা হয়ে বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৬২৯ কোটি টাকায়।
২০১৩ সালে ২ ফেব্রুয়ারি পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন।
পাবনা শহরের লস্করপুরের সাহিদা খাতুন আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলেন, ‘শেখের বেটির (শেখ মুজিবের মেয়ে) কথার দাম আছে। আমরা অ্যাহন ট্রেনে চড়মু।’
পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারোফ হোসেন বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করেছে পাবনার মানুষ তাঁর জন্য সারা জীবন দোয়া করবেন।