বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মানুষের ভিড়
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাতে নিহত সেই বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে বাঙালি জাতি।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ভিড় জমিয়েছেন দেশের সর্বস্তরের মানুষ।
সকালে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর পর পরই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। পর্যায়ক্রমে আওয়ামী লীগ, বিএনপি জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন, সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীদেরও শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা আজমল করিম নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি জানান, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে তিনি প্রতিবছর পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে এই দিনটিতে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আসেন। প্রতিবছরের মতো এ বছরও তিনি বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য গতকাল রাত থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সপরিবারে শ্রদ্ধা জানাতে মিরপুরে হাজির হন এই প্রবীণ।
নাদিয়া জুঁই নামের এক স্কুলছাত্রী বলে, সে বাবা-মার মুখে এবং বইপুস্তক পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছে। ১৪ ডিসেম্বর যেসব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই তার স্কুল থেকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছে নাদিয়া।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত মুহূর্তে পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকার, আলশামস ঘাতকরা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে রাতের অন্ধকারে মেতে ওঠে বুদ্ধিজীবী নিধনযজ্ঞে। তারা হত্যা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর কাছে পরাজয় স্বীকার করে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দুদিন আগে ১৪ ডিসেম্বর সারা দেশ থেকে সহস্রাধিক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে তারা। অনেকের লাশই পাওয়া যায়নি। এভাবে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন চক্রান্তে মেতে ওঠে নির্মম ঘাতক-দালালরা। দেশমাতৃকার শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নিজ কর্মের মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রভূত প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। মুক্তিকামী জনগণকে উদ্দীপ্ত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।
হানাদাররা সেদিন কেবল ঢাকাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী, পদস্থ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী-কৃতী সন্তানকে অপহরণ করে মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে হত্যা করে। সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন।