নীতিমালা না মেনে ভর্তি ফি নিলে আইনি ব্যবস্থা
শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা অমান্য করে বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত ফি আদায় করলে অভিযুক্ত শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
আজ বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত বেসরকারি স্কুল বা স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও সংযুক্ত প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা বিষয়ে ভর্তি তদারকি ও পরিবীক্ষণ কমিটির সভায় একথা জানানো হয়।
সভা থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন নামে ও বেনামে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতিও বাতিল করা হতে পারে। শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী ভর্তির আবেদন ফরমের জন্য এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিওবহির্ভূত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া যাবে।
এ ছাড়া সেশন চার্জসহ ভর্তি ফি মফস্বল এলাকায় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা, পৌর ও উপজেলা এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর ও জেলা সদর এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া যাবে। একই প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এক ক্লাস থেকে পরবর্তী ক্লাসে ভর্তির ক্ষেত্রে সেশন চার্জ নেওয়া যাবে কিন্তু পুনঃভর্তির ফি নেওয়া যাবে না বলেও জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্ধারিত ফি যতদূর সম্ভব মওকুফের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নসহ অন্যান্য ফি নেওয়া যাবে না। এ ছাড়া হেফজখানা ও কোরআনে হাফেজ শিক্ষার্থীদেরকে মূল শিক্ষায় ভর্তি হতে হবে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অবশ্যই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে। লটারি ভর্তি কমিটির সদস্যদের উপস্থিতি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করার পাশাপাশি অপেক্ষমাণ তালিকাও প্রস্তুত রাখতে হবে বলে জানান তিনি।
নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচিত শিক্ষার্থী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের প্রস্তুতকৃত মেধাক্রম অনুসারে নবম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে।
প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শূন্য আসনসংখ্যা উল্লেখ করে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, অভিভাবকদের সন্তুষ্ট করে সমন্বয়ের মাধ্যমে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অধিক টাকা আদায় না করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।
এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা/শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং পুত্র-কন্যা পাওয়া না গেলে তাদের নাতি-নাতনিদের ন্যূনতম যোগ্যতা সাপেক্ষে ভর্তির জন্য শূন্য আসনের ৫% কোটা ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে শূন্য আসনের ২% কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন জিল্লুর রহমান।
জেলা প্রশাসকের সভপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ক্যাব চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক গাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক এ এম তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব সদরঘাট থানার সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজম রনি, জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম, চট্টগ্রাম রেসিডেনসিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, কর্ণফুলী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবু বকর সিকদার।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. হাবিবুর রহমান সভা সঞ্চালনা করেন। সভায় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।