দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ থেকে কখনো দরিদ্রতা যাবে না : গওহর রিজভী
প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, যে দেশে দুর্নীতি থাকে সে দেশ থেকে কখনো দরিদ্রতা যাবে না। দুর্নীতি সরাতে হলে মিডিয়াকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০১৭’ অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তৃতা করছিলেন।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ধানমণ্ডির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মেঘমালা সম্মেলনকক্ষে এ পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক সংলাপে বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার ওপর অনুষ্ঠিত সংলাপে বক্তব্য দেন দৈনিক সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, বাংলাভিশনের বার্তা সম্পাদক শারমীন রিনভী এবং দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইফতেখার মাহমুদ।
গওহর রিজভী বলেন, ‘গণমাধ্যমকে হস্তক্ষেপ করার কোনো নির্দেশনা সরকারের পক্ষ থেকে কাউকে দেওয়া হয়নি। কেউ যদি গণমাধ্যমকে হস্তক্ষেপ করে থাকে, সেটা তার নিজ স্বার্থে করছে এবং এর দায়িত্ব তার নিজের।’
ড. গওহর রিজভী বলেন, সরকারের কোনো একটি সুনির্দিষ্ট বিভাগ, অধিদপ্তর বা এজেন্সির মাধ্যমে সংগঠিত দুর্নীতির অভিযোগে পুরো সরকারের সমালোচনা করা উচিত নয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিকাশের জন্য সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন তিনি।
ড. এ টি এম শামসুল হুদা বলেন, সমাজের অসঙ্গতি ও দুর্নীতি তুলে এনে দেশের সেবা করা যায়। কারণ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় দেশের ও সমাজের উপকার হয়। তিনি বলেন, বর্তমান সমাজে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ঝুঁকিবিহীন নয়। এখানে ঠিক করতে হবে কীভাবে সারভাইভ করা যায়। এর মধ্য থেকেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা আরো বেশি বেশি ভালো প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করবে। আর এতে উৎসাহ হিসেবে কাজ করবে টিআইবির এ পুরস্কার।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য এবার টিআইবির পুরস্কার পেয়েছেন ৯ সাংবাদিক। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- প্রিন্ট মিডিয়া স্থানীয় ক্যাটাগরিতে দৈনিক পূর্বাচলের খুলনার স্টাফ রিপোর্টার এইচ এম আলাউদ্দিন, জাতীয় ক্যাটাগরিতে প্রথম আলো পত্রিকার সাভারের স্টাফ রিপোর্টার অরূপ রায়। ইলেকট্রনিক মিডিয়া ক্যাটাগরিতে মাছরাঙা টেলিভিশনের সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বাবু ও ক্যামেরাপারসন হিসেবে একই টেলিভিশনের সিনিয়র ক্যামেরাপারসন মেহেদী হাসান সোহাগ পুরস্কার পেয়েছেন। ইলেকট্রনিক মিডিয়া প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মো. সবুজ মাহমুদ, ক্যামেরাপারসন রাকিবুল হাসান ও গোলাম কিবরিয়া, ক্যামেরাপারসন মহসীন মুকুল, কাজী মোহাম্মাদ ইসমাইল, গোলাম কিবরিয়া। একই ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার (বর্তমানে চ্যানেল ২৪-এ কর্মরত) মো. জাহিদ মামর ইসলাম সাদ ও যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপারসন তানভীর মিজান।
বিজয়ী সাংবাদিকদের পুরস্কার হিসেবে এক লাখ টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়। পুরস্কারের জন্য বিবেচিত টিভি প্রতিবেদনে ক্যামেরাপারসনের বিশেষ ভূমিকার জন্য তাদের পুরস্কার হিসেবে ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
২০১৭ সালের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতার জুরি বোর্ডে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হেলেনা ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা ও সাংবাদিক জুলফিকার মালিক।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, অসাধু কিছু ব্যক্তির অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সার্বিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতিগ্রস্ত ও প্রশ্রয়দানকারীদের চিহ্নিত করতে গণমাধ্যমকে সরকার সহায়তা করলে ফলশ্রুতিতে তা সরকারের জন্যই ইতিবাচক হবে।