নেত্রকোনায় চিরনিদ্রায় শায়িত বারী সিদ্দিকী
নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন শিল্পী বারী সিদ্দিকী। সবাইকে কাঁদিয়ে একসময়ের বাঁশিবাদক প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বারী সিদ্দিকী চলে গেলেন না ফেরার দেশে। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করায় লোকজ ধারার সংগীতজগতের এক নক্ষত্রকে হারাল সংস্কৃতিজগৎ।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। এর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কয়েকদিন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। তবে এর আগে থেকেই তিনি কিডনি রোগ ও ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন তিনি।
বারী সিদ্দিকীর ছেলে সাব্বির সিদ্দিকী জানান, হাসপাতাল থেকে সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসায় তাঁর মরদেহ নেওয়া হয়।
সাব্বির আরো জানান, সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এবং কর্মস্থল বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে সকাল সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শিল্পীর ছাত্রজীবনের স্মৃতিবিজড়িত নিজ কলেজ নেত্রকোনার সরকারি কলেজ মাঠে বাদ আসর তৃতীয় জানাজা এবং নেত্রকোনা সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের কারলি গ্রামের বাউলবাড়িতে শেষ জানাজার পর চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।
১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিতে তিনটি গান গেয়ে আলোচনায় আসেন বারী সিদ্দিকী। এরই মধ্যে তাঁর বেশ কিছু গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’,‘মানুষ ধরো মানুষ ভজ, ‘পুবালি বাতাসে’, ‘শুয়াচান পাখি’গানগুলো ভক্ত-অনুরাগীদের মুখে মুখে ভেসে বেড়ায়।
নেত্রকোনায় ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর আবদুল বারী সিদ্দিকীর জন্ম। শৈশবে পরিবারেই তাঁর বাঁশি ও গান শেখার হাতেখড়ি। কিশোর বয়সে নেত্রকোনায় শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে তালিম নিতে শুরু করেন বারী সিদ্দিকী। পরে পর্যায়ক্রমে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ বহু গুণী শিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেন তিনি।
নেত্রকোনা শিখরের সভাপতি সংস্কৃতিকর্মী আ ফ ম রফিকুল ইসলাম আপেল জানান, সত্তরের দশকে নেত্রকোনা জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ধ্রুপদী সংগীতের চর্চা শুরু করেন বারী সিদ্দিকী। একসময় বাঁশির প্রতি আগ্রহী হয়ে উচ্চাঙ্গ বংশীবাদনের প্রশিক্ষণ নেন। নব্বই দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন বারী। দেশে ফিরে লোকগানের সঙ্গে ধ্রুপদী সংগীতের মিশেলে গান শুরু করেন তিনি।
তাঁর মৃত্যুতে নেত্রকোনায় শোক ও শ্রদ্ধা জানান বিচারপতি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. মুশফিকুর রহমান, পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খান, সম্পাদক আশরাফ আলী খান খসরু, জেলা বিএনপির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল আমিন, আওয়ামী লীগ নেতা সামছুল রহমানসহ বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠী, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পীর ভক্তসহ সর্বস্তরের মানুষ।