শেবাচিমে চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের হাতাহাতি
বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়ে (শেবাচিম) ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার সকালে হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক চিকিৎসক লাঞ্ছিত ও রোগীর দুজন স্বজন আহত হয়েছেন।
রোগীর ফুফাতো ভাই ও জেলা পুলিশের সদস্য মিজানুর রহমান জানান, তাঁর বোন আমেনা বেগম সন্তান প্রসবের পর রক্তক্ষরণজনিত কারণে গতকাল শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পর লেবার ওয়ার্ডের ইউনিট ২-এর আওতায় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাঁর চিকিৎসাসেবা অব্যাহত ছিল। আজ ভোররাতে আমেনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁরা ওয়ার্ডের চিকিৎসকের কাছে যান। এ সময় চিকিৎসক জানান, রোগীর রক্তের প্রয়োজন। সকাল ৬টার দিকে তাঁরা রক্ত জোগাড় করেন। কিন্তু চিকিৎসক নানান দোহাই দিয়ে সময় নষ্ট করে ভর্তি কাগজে লিখে দেন, রক্তের অভাবে রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না। এ নিয়ে আমেনার স্বামী শাহীন ও তাঁর বড়ভাই মামুনের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এরপর ইন্টার্ন চিকিৎসক আরো লোকজন ডেকে শাহীন ও মামুনকে রুমের মধ্যে আটকে রেখে মারধর করেন। পরে রোগীর কাছে গিয়েও তাদের আবার মারধর করেন। এ সময় রোগীকে লাথি মারেন এক চিকিৎসক। স্বজনরা পালিয়ে গিয়ে রক্ষা পান।
এদিকে সকাল থেকে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক রয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। আর চিকিৎসকদের হামলার শিকার রোগীর স্বামী শাহিনকে স্থানীয় একটি চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাইনি ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান ডা. শিখা সাহা জানান, তিনি খবর পেয়ে ওয়ার্ডে যান। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। আমেনা বাসায় সাত-আট দিন আগে সন্তান প্রসব করেন। কিন্তু তাঁর রক্তক্ষরণ হতে থাকলে গতকাল তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি ঘটে। রোগীর রক্তের প্রয়োজন দেখা দিলে স্বজনদের রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়। কিন্তু স্বজনরা চিকিৎসককে রক্ত জোগাড় করে দিতে বলেন। চিকিৎসক তাদের রক্ত জোগাড় করার নানান মাধ্যম বলে দিলেও তাঁরা তাতে রাজি না হয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করেন।
ডা. শিখা সাহা আরো জানান, রক্তের অভাবে রোগীর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না- চিকিৎসক এমনটা ভর্তি কাগজে লিখলে ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. রাকিবের কলার ধরে লাঞ্ছিত করেন রোগীর স্বজনরা। এ সময় তিনি আত্মরক্ষার জন্য অন্য ওয়ার্ডের চিকিৎসকদের জানান। উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হতে পারে। কিন্তু রোগীর স্বজনদের মারধর করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। হাতাহাতির সময় তাঁদের শরীরে গিয়ে কেউ পড়তে পারে।
ডা. শিখা সাহা বলেন, স্বজনদের আচরণের কোনো প্রভাব রোগীর ওপর নেই। রোগীর রক্তক্ষরণ না থামায় তাঁকে পঞ্চম তলায় অপারেশন থিয়েটারে (ওটি) নিয়ে আসা হয়েছে। সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। আশা করা হচ্ছে রোগী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এদিকে ঘটনার পর সকাল ১০টার দিকে থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কোতোয়ালি থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান জানান, রোগীকে রক্ত দেওয়া নিয়ে চিকিৎসকদের সঙ্গে স্বজনদের ঝামেলা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পাওয়া গেলেও লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে এখন রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী চিকিৎসকদের সঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।