লতিফ সিদ্দিকীর সাংসদ পদ বাতিলে আ. লীগের চিঠি
দল থেকে বহিষ্কারের পর সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনের (নিক) কাছে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আজ রোববার দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
দুপুরে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠির লিখিত জবাব নিয়ে নিক সচিবালয়ে আসেন আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। কমিশনের সচিব মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামের কাছে লিখিত বক্তব্য হস্তান্তর করেন তিনি।
বক্তব্যে বলা হয়, ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স.), পবিত্র হজ এবং তাবলিগ জামাত সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ, গর্হিত বক্তব্য রাখায় এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর এবং সকল ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মানুভূতিতে চরম আঘাত হানায় দলের গঠনতন্ত্রের ৪৬ (ক) ও (ঞ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের পদ থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সভায় আরো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে সাময়িকভাবে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা এবং দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে কেন চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে না তদবিষয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব সাত কার্যদিবসের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রদান করার জন্য বলা হয়েছিল।’urgentPhoto
দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পরবর্তী সভায় লতিফ সিদ্দিকীর জবাবের দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা, তথ্য ও তত্ত্ব গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় সর্বসম্মতিক্রমে দলের নীতি, আদর্শ, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও সর্বোপরি মানুষের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় তাঁকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।
এ সময় মৃণাল কান্তি দাস সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী যে কোনো রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থীর নির্বাচনের আগে বা পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। যেহেতু তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সেহেতু তিনি এখন আর আওয়ামী লীগের কেউ নন। আর সে কারণেই সংসদ সদস্যপদে থাকার যে আইনগত অধিকার তাঁর ছিল সেটি তিনি হারিয়েছেন।
আর তাই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই বক্তব্যে সংবিধানের ৬৬ (৪) অনুচ্ছেদ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১২ (১) ধারা এবং সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৭৮ অনুযায়ী লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ বাতিল করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে বলেও জানান মৃণাল কান্তি দাস।
এর আগে লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের বিষয়টি গত ১৩ জুলাই লিখিতভাবে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানায় দলটি। স্পিকার সেই চিঠি আবার পাঠান নির্বাচন কমিশনের অবগতির জন্য। নির্বাচন কমিশন এ প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা চেয়ে আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীকে আলাদাভাবে চিঠি দেয়।
আজ সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে লতিফ সিদ্দিকীকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ব্যাখ্যা লিখিতভাবে কমিশনে জমা দেওয়া হয়।
এ ছাড়া নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেও বক্তব্য কমিশনে জমা দেন লতিফ সিদ্দিকী। দলের সদস্যপদ বাতিলের কোনো এখতিয়ার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের নেই বলে সেই বক্তব্যে দাবি করেছেন সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।
এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সময় নির্ধারণ করে দুই পক্ষকে নির্বাচন কমিশনে ডাকা হবে বলে জানান মৃণাল কান্তি দাস।