দায়িত্ব নিলেন ডিসি, আসমা-মিলনের মুখে ফুটল হাসি
দরিদ্র শিশু বাদাম বিক্রেতা আসমার (১২) পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) বেগম উম্মে সালমা তানজিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক তাঁর কার্যালয়ে আসমা ও তার পরিবারের সদস্যদের ডেকে নিয়ে এই দায়িত্ব নেন।
আসমার মা বেদেনা বেগমের উদ্দেশে ডিসি বলেন, ‘মেয়েকে আর বাদাম বিক্রি করতে পাঠানো যাবে না। আজ থেকে আসমার পড়ালেখার সব দায়িত্ব আমি নিলাম।’
আসমার শিশু ভাই মিলনেরও (৬) পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন ডিসি। আগামীকাল শনিবার তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করার কথা রয়েছে।
মিলন শহরের একটি চায়ের দোকানে কাজ করত। ছেলেমেয়ের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আসমা-মিলনের মা বেদেনা বেগম। এ সময় ডিসি বেগম উম্মে সালমা তানজিয়ার জন্য দোয়া করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের আলীপুর বাদামতলী এলাকায় দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন কাসেম শেখ ও তাঁর স্ত্রী বেদেনা বেগম। গত রোজার আগে হঠাৎ করেই নিখোঁজ হন কাসেম শেখ। এরপর এ পরিবারটির ওপর দুর্যোগ নেমে আসে। উপায় না দেখে বাসাবাড়িতে কাজ নেন বেদেনা। শিশু ছেলে মিলনকে দেন একটি চায়ের দোকানে কাজে। নিজে ও ছেলের সামান্য আয় দিয়েই কোনো রকমে চলছিল তাদের সংসার। আর মেয়ে আসমা পড়ালেখা করছিল স্থানীয় বাদামতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে। সংসারের হাল ধরতে আসমা পড়ালেখার পাশাপাশি বাদাম বিক্রি শুরু করে। স্কুল থেকে ফেরার পর বাদাম নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। বেশির ভাগ সময় আসমা বাদাম বিক্রি করত ফরিদপুর প্রেসক্লাব এলাকা, সুপার মার্কেট ও শিশু হাসপাতালের সামনে।
প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে ৩০ থেকে ৪০ টাকা লাভ হতো তার। এ দিয়েই সংসারের কিছুটা খরচ ও নিজের লেখাপড়ার বই-খাতা কিনত। আসমার বাদাম বিক্রি করে পড়ালেখার বিষয়টি নজরে আসে সাংবাদিক বিজয় পোদ্দারের। তিনি নিজের টাকায় আসমাকে খাবার ও প্রয়োজনীয় আরো কিছু বই-খাতা কিনে দেন। এ নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে নজরে আসে জেলা প্রশাসকের।
জেলা প্রশাসক আসমা-মিলনের সব দায়িত্ব নেন। গতকাল তিনি তাৎক্ষণিক আসমার মায়ের হাতে দুই হাজার টাকা তুলে দেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ছাড়াও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
শিশু আসমা সবার উদ্দেশে বলে ওঠে, ‘অহন আমি স্কুলে যামু। পড়ালেখা ঠিকমতন করতে পারুম, অহন আর বাদাম বেচা লাগব না। তয় আমার বাবারে আফনেরা খুঁইজ্যা দেন। বাবার লাগি মনডা কান্দে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, ‘সমাজে এখনো অনেক শিশু আছে যারা কাজ করার পাশাপাশি পড়ালেখা করে। একসময় সংসারের কারণে তাদের পড়ালেখা আর হয় না। আমরা যদি এমন শিশুদের কিছুটা দায়িত্ব নিতে পারি, তাহলে এসব অসহায় দরিদ্র শিশুরা পড়ালেখা করে মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে।’