ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ‘ব্যবসার ছক’ মেস মালিকদের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের মেসে থাকার জন্য প্রতিদিন ২০০ টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেস মালিকরা।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহী জেলা মেস মালিক সমিতির সদস্যদের ওই সিদ্ধান্তে সমর্থন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রক্টর দপ্তরে আয়োজিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষার্থীদের চাপে আজ বৃহস্পতিবার আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে মেস মালিকরা। তাঁরা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের থেকে ১০০ টাকা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন, অসহায় ভর্তিচ্ছুরা তাঁদের পরিচিতদের মেসে বেড ভাগাভাগি করে থাকবেন। এতে মেস মালিকদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাই ভর্তিচ্ছুদের জিম্মি করে ব্যবসা করার অন্যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা, মেহেরচন্ডী, বিনোদপুর, মির্জাপুর ও তালাইমারী এলাকার মেস মালিকরা সিট ভাড়া, বিদুৎ বিল ও পানি বিলের কারণ দেখিয়ে প্রত্যেক ভর্তিচ্ছুর কাছ থেকে প্রতি রাতের জন্য ২০০ টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। মেসের ভর্তিচ্ছুদের পরিচিত কেউ থাকলেও তাঁর কাছ থেকেও সেই টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল এ বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা মেস মালিক সমিতির সদস্যদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে ২০০ টাকা নেওয়ার বিষয়টি সমর্থন করে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের মেসে অবস্থান করা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি পরীক্ষার সময় প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভর্তিচ্ছুরা আসেন। অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হলেও তাঁদের থাকার জন্য আলাদা কোনো কক্ষ বা সিটের ব্যবস্থা করতে পারে না মেস মালিকরা। একটি সিটে ভাগাভাগি করে ভর্তিচ্ছুদের সঙ্গে তাঁদের থাকতে হয়।
বিনোদপুরে অবিস্থত ক্ষণিকা ছাত্রবাসের করিম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভর্তিচ্ছুদের অসুবিধার কথা না ভেবে মেস মালিকরা তাঁদের ব্যবসাকে বড় করে দেখেন। মেস মালিকদের এ মুনাফালোভে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সায় না দেওয়া উচিত ছিল।’
নাইমুর নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বলেন, ‘এর আগে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যলয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। কোথাও এ ধরনের কোনো নিয়ম নেই। এখানে ভর্তিচ্ছুরা আসলে মেস মালিকরা নিরাপত্তা দেওয়ার নাম করে তাঁদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়।’
এদিকে মেসে অবস্থান করতে ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার এ সিন্ধান্তের প্রতিবাদ জানয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জেলা সমিতি, সামজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতারা। এর প্রতিবাদে আজ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি আবদুল মজিদ অন্তর বলেন, ‘এটা পুরোপুরি একটা অনৈতিক সিদ্ধান্ত। মেস মালিকদের এমন সিন্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমর্থন জানানো খুবই দুঃখজনক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেসে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব বন্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেয় না।’
বিনা টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান অন্তর।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘একটু আগে (আজ সকালে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০০টাকা থেকে কমিয়ে ১০০টাকা করার নির্দেশ দিয়েছেন।’
খোরশেদ আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একজন ভর্তিচ্ছু যে কদিন মেসে থাকুক কেন, তাঁদের কাছ থেকে শুধু ১০০টাকা করে নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘গতকাল মেস মালিক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। ভর্তিচ্ছুদের কাছ থেকে কোনো মেসে টাকা নিতে চাইলে ১০০টাকার বেশি নিতে পারবে না। এর বেশি কোনো মেস মালিক টাকা নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২২ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। এবার ভর্তি পরীক্ষায় কোটাসহ চার হাজার ৬৩২টি আসনের বিপরীতে তিন লাখ ১৬ হাজার ১২০টি ফরম বিক্রি হয়েছে।