জুনাইদ বাঁচলেন, কিন্তু হারালেন পুরো পরিবারকে
দুর্ঘটনার ৩০ মিনিট আগেও দেশে ফোন দিয়েছিলেন রোকেয়া বেগম। জানতে চেয়েছেন স্বজনদের অবস্থা। রোকেয়ার ভাইয়ের ছেলে ইয়াহিয়া সিদ্দিকী এ কথা জানান।
কে জানত ৩০ মিনিট পরই রোকেয়া চলে যাবেন না ফেরার দেশে। শুধু তিনি না, তাঁর সঙ্গে চলে গেছে তাঁর চার শিশু সন্তানও!
কুয়েতের একটি ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) যন্ত্র বিস্ফোরণে রোকেয়ার পরিবারের পাঁচজন নিহত হন। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টার দিকে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় রোকেয়া বেগমের পাশাপাশি নিহত হয়েছে মেয়ে জামিলা (১৫) ও নাবিলা (৯), ছেলে ইমাদ (১২) ও ফাহাদ (৫)। কুয়েত সিটির সালমিয়াত নামের এলাকায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। রোকেয়ার স্বামী জুনাইদ আহমদ তখন বাসায় ছিলেন না।
পরিবারটির গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কান্দিগাঁওয়ে। দুর্ঘটনার খবরে ওই এলাকায় শোক নেমে এসেছে। ওই গ্রামে জড়ো হচ্ছেন নিহতদের স্বজনরা। সেখানেই রোকেয়ার ফোনের কথা জানান ইয়াহিয়া।
সোমবার রাত ১১টায় কান্দিগাঁওয়ে পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পৌঁছায়। এর পরই নেমে আসে শোকের ছায়া।
কুয়েত প্রবাসী জুনাইদ আহমেদের প্রতিবেশী জয়নাল আবেদীন জানান, বাড়িতে জুনাইদের বৃদ্ধ মা ছাড়া আর কেউ নেই।
জয়নাল আবেদীন আরো জানান, জুনাইদ আহমদ তাঁর পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে কুয়েতে বসবাস করছেন। জুনাইদের অপর দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই স্বপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ভাই সপরিবারে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে জুনাইদ সপরিবারে দেশে এসে আবার চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি কুয়েত ফিরে যান।
ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার রাতেই জুনাইদের বড় বোন মুসলিমা বেগম তাঁর মায়ের পাশে এসে অবস্থান করছেন। এছাড়া অন্য স্বজনরাও আসছেন।
কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহামম্মদ মাহমুদুল হকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জুনাইদের বাড়িতে আসেন।
স্বজনরা তাদের লাশ দ্রুত দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন কখন তাদের প্রিয় স্বজনের লাশ বাড়িতে পৌঁছায়।
কুয়েতের সালমিয়াতের ওই বাসভবনে এসির বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে সন্তানদের নিয়ে নিচে নামতে গিয়ে রোকেয়া বেগম ও তাঁর চার শিশু সন্তান শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যান। ঘটনার সময় রোকেয়ার স্বামী জুনাইদ আহমদ বাসার বাইরে থাকায় বেঁচে যান। লাশ কুয়েত সিটির মোবারক আল কবির হাসপাতালে রাখা হয়েছে।