‘মডেল রাউধা আত্মহত্যা করেছিলেন’
‘রাজশাহীতে পড়তে আসা ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদকন্যা মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফ আত্মহত্যা করেছিলেন।’ তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় আদালতে দাখিল করা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাজশাহী মহানগর হাকিম আদালত ১-এ এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিলেও কোনো আদেশ দেননি। এর আগে দুই দফায় করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল মালদ্বীপের ওই মডেল আত্মহত্যা করেছিলেন।
রাজশাহী আদালতের পুলিশ পরিদর্শক আবুল হাশেম এ তথ্য দিয়ে জানান, রাউধা হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক আসমাউল হক গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তাদের কাছে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মঙ্গলবার দুপুরে তারা সেটি মহানগর হাকিম আদালত ১-এ ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
আবুল হাশেম জানান, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তাই বাদীপক্ষের আইনজীবী এই প্রতিবেদনে নারাজি দিতে চান। এ জন্য তিনি বিচারক মাহবুবুর রহমানের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন। তবে এ বিষয়ে আদালত এখনো কোনো আদেশ দেননি। দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আসমাউল হক বলেন, দুই দফার ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট এবং রাউধার ব্যবহৃত মুঠোফোন পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, রাউধা আত্মহত্যাই করেছিলেন। এর পরই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত শেষে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রতিবেদন দাখিলের আগে মামলার বাদী রাউধার বাবাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আসমাউল হক জানান, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই রাউধা আত্মহত্যা করেছিলেন। মালদ্বীপের শাহী গণি নামে এক যুবকের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই যুবক পড়াশোনার জন্য এখন লন্ডনে থাকেন। রাউধার হোয়াটসঅ্যাপ (যোগাযোগ মাধ্যম) থেকে জানা গেছে, শাহীর সঙ্গে রাউধার সম্পর্ক ভেঙে যায়। এ নিয়ে সাংঘাতিক রকমের মানসিক চাপে ছিলেন রাউধা। আত্মহত্যার আগের রাতেও শাহীর সঙ্গে রাউধার কথা হয়েছিল। নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও তদন্তের পর অন্যান্য রিপোর্ট মিলিয়ে তাই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ২৯ মার্চ রাজশাহী নগরীর শাহ মখদুম থানার নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে রাউধা আতিফের (২২) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মালদ্বীপের নীলনয়না মেয়ে রাউধা বাংলাদেশে এসেছিলেন পড়তে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মডেলিং করতেন।
রাউধার মৃত্যুর দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ শাহ মখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। রাউধার মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগরীর হেতমখাঁ গোরস্থানে দাফন করা হয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
এরপর মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহী এসে ঘটনা তদন্ত করেন। এ ছাড়া রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ এসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গত ১০ এপ্রিল রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় রাউধার সহপাঠী ভারতের কাশ্মীরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়। সিরাতকে পুলিশ গ্রেপ্তার না করলেও তাঁর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত ১৪ এপ্রিল হত্যা মামলাটি উচ্চতর তদন্তের জন্য শাহ মখদুম থানা থেকে সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয়বারের মতো রাউধার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ওই প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, হত্যা নয়, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন।
তবে মোহাম্মদ আতিফ এখনো দাবি করছেন, তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। এরই মধ্যে কনকলতা নামের রাজশাহীর এক নারীকে তিনি বিয়ে করে সংসারও করছেন। রাউধাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল ‘নাইনের’ একটি দল রাজশাহীতে এসে সম্প্রতি একটি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করে।