শিক্ষার্থী-কর্মচারী সংঘর্ষ, তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মচারীদের সংঘর্ষের জের ধরে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম তাঁর মায়ের এক্স-রে করাতে গতকাল সোমবার হাসপাতালের এক্স-রে কক্ষে যান। কিন্তু তাঁর দেওয়া স্লিপে কোনো চিকিৎসকের সই না না থাকায় কর্মরত টেকনিশিয়ান মোফাজ্জল হোসেন খান চিকিৎসকের সই নিয়ে পরের দিন আসতে বলেন। ফিরে গিয়ে জাহাঙ্গীর বিষয়টি সহপাঠীদের জানান। এতে অন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। পরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জোট বেঁধে মিছিলসহ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে হাসপাতালের এক্স-রে ও প্যাথলজি বিভাগের কক্ষ, টিকিট কাউন্টারের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করেন।
এ সময় সেখানে উপস্থিত আউটসোর্সিং কর্মচারীরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের বেধরক মারধরে কর্মচারী শাহীন গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনার জের ধরে কয়েক শিক্ষার্থীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদার আমজাদ হোসেন পলাশসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আজ জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের রবিউল আলম সরকার।
এদিকে গতকালের ওই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন আউট সোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরাসহ হাসপাতালের অন্য কর্মচারীরা।
অপরদিকে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরাও সকালে ক্লাস বর্জন করে। এ সময় তারা কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখে এবং একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ সময় কলেজ ও হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদার ও দায়ী কর্মচারীদের শাস্তির দাবি জানায়।
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও কর্মসূচির কারণে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েক কর্মকর্তা ও শিক্ষক উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আসাদ হোসেন সকাল ৯টার দিকে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর দুপুর ১২টায় তিনি বৈঠকে বসার জন্য কর্মচারীদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে আহ্বান জানান।
দুপুর পৌনে ১টার দিকে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য কর্মচারীরা দলবেঁধে মিছিল নিয়ে কলেজের একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করে। তারা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠার সময় দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়।
এ সময় কর্মচারীদের সঙ্গে থাকা আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদারকে মারধর শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় অধ্যক্ষের কক্ষসহ একাডেমিক ভবনের আসবাবপত্র ও দরজা জানালাসহ বিভিন্ন মালামাল ভাঙচুর করা হয়। এতে হাসপাতালের রোগী ও অন্যদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়লে তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত নয়জন আহত হয়।
পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
খবর পেয়ে গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোলায়মান মিয়া ও গোলাম সবুর, জয়দেবপুর থানার ওসি আমিনুল ইসলামসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।
আহতদের মধ্যে মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ নিয়াজ ও মোহম্মদ উল্লাহ কাজল, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহরীন শেলি অর্পা, সীমান্ত সালেহীন ও কামাল আহমেদ এবং কর্মচারী রাজীব হোসেন, সজীব হোসেন ও ঠিকাদার আমজাদ হোসেন পলাশকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. আসাদ হোসেন জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে বিকেলে কলেজ একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অনির্দিষ্টকালের জন্য মেডিকেল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।