আতঙ্ক নয়, ব্লু হোয়েল থেকে বাঁচাবে সচেতনতা
বলা হয়, নীল তিমি মৃত্যুর আগে সাগরের তীরে উঠে এসে আত্মহত্যা করে। এ কারণেই ইন্টারনেটের ডার্ক ওয়েব গেমের নাম রাখা হয়েছে ‘Blue whale’ বা নীল তিমি।
মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত রাশিয়ার যুবক ফিলিপ বুদেকিন জানান, হতাশাগ্রস্তদের পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্যই গেমটি বানিয়েছেন তিনি। তাঁর এই ফাঁদে পা দিয়ে রাশিয়া ও ভারতে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে বহু কিশোর-কিশোরী। বাংলাদেশেও এই গেমে আসক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে কেউ কেউ।
এনটিভি কথা বলেছে ব্লু হোয়েল খেলেছেন দুজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ব্লু হোয়েল খেলোয়াড় এক কিশোর এনটিভিকে জানায় তার অভিজ্ঞতার কথা। সে বলে, ‘একটা টাস্ক দিল যে ছাদের যে রেলিং, রেলিংয়ের ওপর দিয়ে হাঁটতে হবে। আবার মাঝেমধ্যে বলে যে রাতের বেলা ছাদে গিয়ে কাটাও।’
সামাজিকতা ও নিরাপত্তার কারণে নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক তরুণী জানান, যখনই তাঁকে আত্মঘাতী হওয়ার ধাপে নিয়ে যাচ্ছিল গেমের কিউরেটররা, তখনই জীবননাশী চক্র থেকে বের হয়ে আসেন তিনি।
কেমন ছিল ব্লু হোয়েল গেমস? জানতে চাইলে ওই তরুণী বলেন, ‘রাত ৪টার ২০-এ উঠে আপনার হরর মুভিজ বা ক্লিপস দেখা। তারপরে ২৪ ঘণ্টা কারো সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তার পরে আরেকটা এলো ব্রিজে যাওয়া। তোমার আশপাশে যদি কোনো ব্রিজ থাকে, তুমি সেইখানে যাও, ওইটার একদম কিনারায় গিয়ে দাঁড়াও। সবশেষ চাওয়া হলো সেটা হচ্ছে আমাকে ছাদের কার্নিশ ধরে হেঁটে যেতে হবে এবং সেটা আমাকে সেলফি ভিডিও করে তাদের পাঠাতে হবে। এবং ওই সেলফি ভিডিওটা আপলোড করলে আমি পরের টাস্কটা আনলক করতে পারব।’
ব্লু হোয়েলের ফাঁদে পা দেওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও এখন পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর হাতেও দেখা গেল টাস্ক অনুযায়ী ব্লেড দিয়ে কেটে নীল তিমি আঁকা।
তবে আতঙ্কিত না হওয়ার মতো হলেও এরই মধ্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেই ব্লু হোয়েলে আসক্ত কয়েকজন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে প্রতিষ্ঠানটির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার জানান। তিনি বলেন, ‘কয়েকটা বাচ্চা আমরা যে পেয়েছি, বাবা-মা নিয়ে এসেছেন, তাদের তো একদম এভিডেন্স (প্রমাণ) সহই নিয়ে এসেছেন। কাজেই সেটা ইউজ হচ্ছে কিন্তু। একটাও যদি ইউজ করে দ্যাট ইজ ভেরি সিগনিফিকেন্ট। যেটার জন্য হলো মা-বাবাদের কনসার্ন হওয়া উচিত। স্টিল আমি বলব যে এই ব্লু হোয়েলের নামে যে ইন্টারনেট গেমের যে নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আমরা কথা বলার সুযোগ পাচ্ছি, দ্যাট ইজ ভেরি ইমপরট্যান্ট।’
অনলাইন গেম ব্লু হোয়েল মূলত কোন বয়সের খেলোয়াড়দের হাতছানি দেয়? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘অনেক শিশু দেখা যায় যে এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগে। কনফিউজড, তারা কী করবে। কোনটা ভালো-মন্দ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তাদের থাকে না। অনেক বাচ্চার মধ্যে এ রকম দেখা যায়। এবং তারাই আসলে এ জাতীয় প্রলোভনের শিকার হয়। কাউকে যদি সন্দেহ হয় যে এ রকম গেমে আক্রান্ত, তাহলে পারিবারিকভাবে অথবা কোনো সাইকিয়াট্রিস্ট বা এদের সাহায্য নিয়ে এই শিশুদের আসলে এই আসক্তি থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।’
ভার্চুয়াল জগতের হাতছানি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে মা-বাবাকে সন্তানের খেলাধুলা ও পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ মানসিক রোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।