লুসি বিউটি পার্লারে ব্যবহার হয় ৮-১০ বছরের পুরোনো পণ্য
চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ বিউটি পার্লারগুলোর তালিকা করলে প্রথম সারিতেই থাকবে নগরীর মেহেদীবাগ এলাকার লুসি বিউটি পার্লারের নাম। শহরের পুরোনো সৌন্দর্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটি একটি। বিশেষ করে প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও আগ্রহও কম না।
সেই লুসি পার্লারেই মিলেছে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য। ছয় মাস বা এক বছর নয়, এই প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হতো আট থেকে ১০ বছরের পুরোনো পণ্য।
আজ বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ব্যবহারের দায়ে ঐতিহ্যবাহী এই বিউটি পার্লারকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া মুন বলেন, ‘আজকে লুসি বিউটি পার্লারে আমরা মোবাইল কোর্টের অভিযানে এসেছি এবং এসে এখানে প্রচুর অনিয়ম পেলাম। অনিয়মের মধ্যে সবচেয়ে বড় যেটা সেটা হচ্ছে যে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রোডাক্ট তাঁরা ব্যবহার করছেন। ৮-১০ বছর আগে মেয়াদ চলে গেছে এ ধরনের প্রোডাক্ট তাঁরা ব্যবহার করছেন। সেগুলোর মধ্যে মেকাপ প্রোডাক্ট আছে। যেগুলো মানুষের মুখে সব সময় অ্যাপ্লাই করা হয়। এবং এক্সপার্টিজরা বলবেন যে এই ৮-১০ বছর আগে মেয়াদ চলে গেলে সেই প্রোডাক্ট দিয়ে আসলে কী কী ধরনের স্কিন ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে।’
এ সময় পার্লারটি থেকে সংগ্রহ করা ল্যাকমে ব্র্যান্ডের একটি প্রসাধনী সাংবাদিকদের দেখিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১০ সালে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি থেকে শতাধিক পণ্য জব্দ করা হয়েছে, যেগুলোর মেয়াদ ন্যূনতম তিন বছর ও সর্বোচ্চ ১০ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে।
চুল ধোয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি প্যান্টিন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুর বোতল দেখান তানিয়া মুন। জানান, এটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে ছয় মাস আগে। এটি দিয়েই বর্তমানে সেবাগ্রহীতাদের চুল ধোয়া হচ্ছিল। মেয়াদ না থাকা এসব পণ্য দিয়ে গ্রাহককে সেবা দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলেও জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া মুন।
ভোক্তা অধিকার আইনের ৪৫, ৫০, ৫১ ও ৫৩ ধারার উল্লেখ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, এসব ধারায় বলা আছে প্রতিশ্রুত পণ্য যদি কোনো প্রতিষ্ঠান না দেয়, তাহলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এ ঘটনায় পার্লারের কর্মীদের সতর্ক করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কথা হয় চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুন নাহারের সঙ্গে। তিনি জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের পণ্য ব্যবহারের কারণে দেশে চর্ম রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। তাঁর কাছে আসা বেশির ভাগ রোগীরই দেখা যায় বাজে পণ্য ব্যবহারের কারণে মুখ ফুলে গেছে না হয় ব্রণ বেশি হচ্ছে। পার্লারে ফর্সা হতে গিয়ে তাঁরা আরো বেশি কালো হয়ে যান। চুল রং করতে গিয়ে নানা ধরনের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায়ও পড়ছেন অনেকে। সে কারণে যে কোনো পণ্য ব্যবহারের আগে তাঁর মেয়াদ দেখে নেওয়া জরুরি বলেও মনে করেন এই চিকিৎসক।