বাংলাদেশ মেডিকেলে পরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা
রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রতিষ্ঠানে রোগীদের পরীক্ষা (টেস্ট) করাতে বাধ্য করছে। হাসপাতালের ‘বিশেষ বিজ্ঞপ্তি’তে লেখা রয়েছে : সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানেই করতে হবে।
হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা শিমুল হোসেন তাঁর কাছে থাকা প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) দেখিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আপনি ডাক্তার দেখিয়েছেন মানে দেওয়া যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখানেই করতে হবে। বাইরে থেকে করালে এখানে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সেটা মেডিকেলেই রোগীদের জন্য বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লেখা আছে। আর রোগের কথা যা যা বলবেন সেই টেস্ট তো দেবেই, সঙ্গে আরো অনেক বেশি বেশি টেস্ট দেবে আপনাকে।’
শিমুল জানান, এখানে চিকিৎসা নিতে আসার আগে তিনি অন্য আরেকটি স্থানে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করেছিলেন। পরে চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে আসেন। এখানে আসার পর এক চিকিৎসক জানান, তাঁর হার্টে ছিদ্র আছে। সমস্যা বোঝার পর আবার আরেকবার ইকোকার্ডিওগ্রাফি করতে বলেন ওই চিকিৎসক। সঙ্গে আরো নয়টি পরীক্ষা।
শিমুল বলেন, ‘ইকো টেস্ট বা ইসিজিটা তিনি আবার দিতেই পারেন আপডেট দেখার জন্য। কিন্তু বাকিগুলো কেন? এগুলো তো সবই অযাচিত।’
এই ঘটনার পরে সেখানে আর চিকিৎসা করাননি শিমুল। তিনি এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক শুধুমাত্র ইকোকার্ডিওগ্রাফি করাতে বলেন।
সালমা আক্তার নামে আরেক রোগী বলেন, ‘এখানে চিকিৎসা নিতে আসলে আপনাকে এখানেই যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে। বাইরে থেকে আসা রিপোর্ট এরা দেখবে না। আমি অনেক দিন ধরে আমি এখানেই ডাক্তার দেখাই। আমি ভালোভাবেই জানি, আপনাকে এখানেই সব করাতে হবে। এবং এরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা যা যা প্রয়োজন তার থেকেও বেশি বেশি দেয়। আর ভাই বলেন না, সব জায়গাতেই টাকার খেলা।‘
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের কক্ষের সামনে রোগীদের উদ্দেশে বিশেষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখেছে, ‘চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা অত্র হাসপাতালেই সম্পাদন করিতে হইবে। বাইরের হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য নয়।‘
শিমুল হোসেনের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে হাসপাতালটির অভ্যর্থনা ও অনুসন্ধান বিভাগ, অ্যাডমিশন ডেস্ক, টিকেট কাউন্টার এবং বিল কাউন্টারে জানতে চাওয়া হয় পরীক্ষাগুলো বাইরে থেকে করানো যাবে কি না। তবে সব জায়গাতেই বিশেষ বিজ্ঞপ্তির পুনরাবৃত্তি করা হলো।
এরপর রোগী সেজে এই প্রতিবেদক বাংলাদেশ মেডিকেলের কয়েকজন চিকিৎসককের সঙ্গে কথা বলেন। এর মধ্যে ডা. ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাইরে থেকে করা যাবে না। বাইরে থেকে করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ জবাবে এই প্রতিবেদক জানান, বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাঁর ভাই কাজ করেন। সেখান থেকে পরীক্ষাগুলো তিনি একটু কম খরচে করাতে পারবেন। একথা শুনে ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ‘বাইরে থেকে যদি আপনি করাতেই চান তাহলে আপনাকে বাংলাদেশ মেডিকেলের চেয়েও ভালো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এমন স্থানে করাতে হবে। নতুবা ওই রিপোর্ট গ্রহণযোগ্য হবে না।’
এসব বিষয় স্বীকার করেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ রউফ সরদার। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানেই করাই তার কারণ হলো, অন্য স্থানের রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। তা ছাড়া আমরা তো এখানে স্বল্প খরচে ভালো পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট প্রদান করি। অন্য স্থান থেকে আর করানোর প্রয়োজনও পড়ে না।‘
রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাধ্য করা যাবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো নির্দিষ্ট হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা জন্য রেফার করতে পারবে না।
বাংলাদেশ মেডিকেলের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জানতে চাইলে ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যদি বাংলাদেশ মেডিকেল ওই বিশেষ বিজ্ঞপ্তি লিখে রেখেই থাকে, তাহলে এটা একটা বড় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে শাস্তি পেতে হবে।