সাইবার নিরাপত্তায় বিশেষজ্ঞদের আট সুপারিশ
গণসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার ঝুঁকি নির্ধারণ ও জাতীয় সাইবার নিরাপত্তায় সরকারের কাছে আটটি সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে সচেতনতামূলক কর্মসূচি শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন’ এসব সুপারিশ তুলে ধরে।
সংবাদ সম্মেলনে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ হাসান বলেন, ‘সাইবার অপরাধ বর্তমান বিশ্বে মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করে দিয়েছে তেমনি এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। প্রতারণা, জালিয়াতি, অপহরণসহ অনেক অপরাধ এখন করা সম্ভব হচ্ছে। সাইবার অপরাধের ভয়াবহ উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা।’
আগামী রোববার শুরু হচ্ছে সাইবার নিরাপত্তা সচেতনতা মাস। এ বছর এই মাসকে সামনে রেখে বিশেষজ্ঞরা যে আটটি সুপারিশ তুলে ধরেছেন, সেগুলো হলো :
সচেতনতা
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের সাইবার অপরাধে ভুক্তভোগীরা ৭৫ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন না। ৬৫ শতাংশই তথ্য-প্রযুক্তি আইন সম্পর্কে জানেন না। তাই আইন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা
সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি উদ্বেগ যথেষ্ট নয়। এটি দেশের সব নাগরিকের সম্মিলিত দায়িত্ব। তাই এ সম্পর্কে যেকোনো বেসরকারি উদ্বেগকে সরকারের পক্ষ থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করা প্রয়োজন।
দক্ষ জনশক্তি তৈরি
দেশের সাইবার নিরাপত্তায় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এ জন্য সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। সেখানে স্বল্প মূল্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হলে সাইবার নিরাপত্তা প্রকৌশলী পেশায় অনেকে উৎসাহিত হবে।
জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার ঝুঁকি চিহ্নিত করা
ডিজিটাল বাংলাদেশের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সব প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। আইটি তদন্তের মাধ্যমে আর্থিক, বিদ্যুৎ ও পরিবহন খাতসহ অন্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সাইবার ঝুঁকি চিহ্নিত করতে হবে।
সাইবার নিরাপত্তার কাজে দেশি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দেওয়া
বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তার কাজ দেওয়া হলে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এ জন্য দেশের সাইবার নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট কাজে অবশ্যই দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও জনশক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
গণমাধ্যমে প্রচার
জনসচেতনতা তৈরিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ জন্য সাইবার অপরাধের ঘটনা, এর ভয়াবহতা, প্রতিকার, বিশেষজ্ঞের মতামত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রশিক্ষিত জনবল বাড়ানো
নিবিড় পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের অনেকে থানা পুলিশের কাছে গিয়েও প্রতিকার পাচ্ছে না। দক্ষতার অভাবে সাইবার অপরাধের বিষয়গুলো তদন্তে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে হিমশিম খেতে হয়। পুলিশের সাইবার অপরাধ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সবচেয়ে বড় ইউনিট সিআইডির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেন্টারে জনবলের সংখ্যা এখন প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে কারিগরি বিষয়গুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় ৩০ জন। এত কম সংখ্যক জনবল নিয়ে দেশের সব থানা থেকে আসা অভিযোগের তদন্ত কাজ সামাল দেওয়া অসম্ভব। এ জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে দক্ষ জনবল বাড়তে হবে। দেশের সব থানায় সাইবার অপরাধ তদন্ত কর্মকর্তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
আইপি লগ সংরক্ষণ আইন
কম্পিউটার বা মুঠোফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযুক্ত করতে হলে একটি পরিচিতি নম্বর বা ঠিকানা লাগে, যা আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) অ্যাড্রেস নামে পরিচিত। কোন আইপি অ্যাড্রেসের বিপরীতে কোনো ব্যক্তি ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছে, তা আইএসপিতে রেকর্ডভুক্ত করে রাখার উপায় হলো ‘আইপি লগ’। দেশে ঠিকমতো আইপি লগ সংরক্ষণ না করার সুবিধা নিচ্ছে সাইবার অপরাধীরা। বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তি আইনে কোথাও আইপি লগ সংগ্রহের বিষয়টি উল্লেখ নেই। তাই আইপি লগ সংরক্ষণ ও তা কাজে লাগতে হলে সংশ্লিষ্ট আইন হালনাগাদ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সেক্রেটারি ওমর ফারুক খন্দকার, আহ্বায়ক কাজী মুস্তাফিজ, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান, কম্পিউটার প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেনসহ অনেকে।