‘বাংলাদেশের সংহতি ও মহানুভবতা আড়ালে পড়বে না’
জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশের সরকার, মানুষ যে সংহতি ও মহানুভবতা দেখিয়েছে তা কখনো আড়ালে পড়ে যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘এ সংহতিকে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবেও সাহায্য করতে হবে।’
আজ শনিবার কক্সবাজারে ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ে এসব কথা বলেন সংস্থাটির প্রধান।
ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘আমি দেখেছি শরণার্থীদের জন্য শত শত মানুষ পানি এগিয়ে দিচ্ছে, বাঁশের ব্যবস্থা করছে, কম্বল দিয়ে আসছে। হতে পারে তা একটু অগোছালো। কিন্তু এ সংহতির প্রশংসা করতেই হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন গ্র্যান্ডি। তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার হিসেবে আমি প্রথমেই কৃতজ্ঞতা জানাব শরণার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে রাখার জন্য। এটা একবার না বাংলাদেশ একাধিকবার করেছে।’
ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘গত কয়েক সপ্তাহে চার লাখ ৩০ হাজার শরণার্থী এসেছে নর্দার্ন রাখাইন স্টেট থেকে।
ফিলিপো গ্র্যান্ডি কক্সবাজার জেলাকে উল্লেখ করে বলেন, ‘আপনারা জানেন- এ জায়গাটা বেশ ছোট। বাংলাদেশেরই একটি ছোট জেলা। এ জেলায় দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ আছে। সম্প্রতি চার লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শরণার্থী এসেছে, যুক্ত হয়েছে তিন লাখ শরণার্থীর সঙ্গে যারা আগে থেকেই আছে। বুঝতেই পারছেন এ জেলার জনসংখ্যা কীভাবে বেড়ে গেছে এখন।’
ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘গতকাল ক্যাম্পে গিয়ে যারা মাত্রই এসেছেন এমন অনেক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলি আমি। তাদের সবকিছু প্রয়োজন। খাবার, বিশুদ্ধ পানি, আশ্রয়, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যথাযথ একটা থাকার জায়গা প্রয়োজন। অধিকাংশই পলিথিনের নিচে বাস করছে। ক্যাম্পের বাইরে এসব মানুষ থাকছে। তাদের থাকার জন্য জায়গা দরকার। কিন্তু সব কিছুই সংগঠিতভাবে (অর্গানাইজড) হওয়া প্রয়োজন। আর এটা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।’
গ্র্যান্ডি বলেন, ‘ওদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, নিজেদের দেশে সহিংসতা দেখে ও অভিজ্ঞতার কারণে তাঁদের মধ্যে এক ধরনের ট্রমা কাজ করছে। আপনারা সবাই নিশ্চয়ই তাঁদের কথা শুনেছেন। আমি নিজে তাঁদের কথা শুনে বেশ হতভম্ব হয়ে যাই। অনেকে শারীরিকভাবে আহত। কিন্তু হৃদয়ে ও মনে আঘাত নিয়ে এসেছেন তাঁরা।’
ফিলিপো গ্র্যান্ডি বলেন, ‘প্রথমেই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। কারণ ওই সহিংসতার ভয়েই মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার চালু করতে হবে। আপনারা জানেন, সেখানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ও ইউএনএইচসিআর কাজ করছে, কিন্তু খুবই সীমিত আকারে এবং প্রবেশাধিকারও নিয়ন্ত্রিত।’
ইউএনএইচসিআর-এর প্রধান আরো বলেন, ‘সরকার এরইমধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা এ ব্যাপারে কারিগরি সহযোগিতা করছি। নিবন্ধন প্রক্রিয়া হলে সহযোগিতার ব্যাপারটি গঠনমূলক হবে। এমনকি প্রত্যাবর্তনের সময়ও চিহ্নিত করণে সহজ হবে।’