মেঘনায় নৌকাবাইচের উৎসবে লাখো মানুষের ঢল
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদীতে হয়ে গেল গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ। উৎসব আর আনন্দে লাখো মানুষ উপভোগ করল আবহমান কাল থেকে চলে আসা বাঙালির এই ঐতিহ্য।
আজ শনিবার বিকেলে মেঘনা নদীর পুরাতন ফেরিঘাট এলাকায় স্থানীয় সামাজিক সংগঠন গাঙ সমিতি এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ভৈরবে সাত বছর ধরে এই উৎসবের আয়োজন করে আসছে গাঙ সমিতি। এবারের উৎসবের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এলিন ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড।
বিকেল ৪টার দিকে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে তালিকাভুক্ত ২২টি নৌকা তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ওই তিন গ্রুপের প্রতিটির প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করা নয়টি নৌকা অংশ নেয় চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায়। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শফিউল্লাহর নৌকা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
উৎসব সম্পর্কে সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক সামসুজ্জামান জানান, তাদের আয়োজন করা এই নৌকাবাইচ এখন শুধুই নৌকাবাইচে সীমাবদ্ধ নয়, এটি এখন এ অঞ্চলের একটি নিয়মিত বার্ষিক উৎসবে পরিণত হয়েছে। যেখানে আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলার লাখো মানুষের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয়।
উপভোগ্য এই নৌকাবাইচ দেখতে বিকেল হওয়ার আগে মধ্য দুপুরেই লোকজন এসে নদীর তীরে নিজেদের স্থান করে নেন। নারী, পুরুষ ও শিশুদের উপস্থিতিতে উত্তরের পুরাতন ফেরিঘাটের জেটিঘাট থেকে দক্ষিণের যমুনা অয়েল কোম্পানির তেলের ডিপো ঘাট পর্যন্ত এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর ওপর লোকে-লোকারণ্য হয়ে ওঠে। এ ছাড়া লঞ্চ, ট্রলার, স্পিডবোটসহ বিভিন্ন জলযান নিয়ে উৎসাহী জনতা নদীতে ভাসমান অবস্থায় প্রতিযোগিতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। আশ্বিনের তীব্র রোদ আর প্রচণ্ড গরমও তাঁদের এই উৎসবে অংশ নেওয়া থেকে দূরে রাখতে পারেনি।
নৌকাবাইচ উপভোগ করতে আসা ভৈরব উপজেলার শিমুলকান্দি গ্রামের দবির উদ্দিন, পৌর এলাকার জগন্নাথপুর গ্রামের শাহীন মিয়া, ভৈরব বাজারের আকলিমা আক্তার জানান, তাঁরা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে নৌকাবাইচ দেখতে এসেছেন। বসার জায়গা দখলে রাখতে দুপুর ১২টায় এসে নদীর তীরে পাথরে অবস্থান নিয়েছেন। পাশের উপজেলা বেলাবোর ইব্রাহিমপুরের জুবায়ের তালুকদার জানান, তিনিও পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন। জানালেন, তালে তালে জলের ঢেউয়ে বাইচের দাঁড়িদের বৈঠা চালানো তাঁর কাছে অপূর্ব লাগে। এটা একটা অন্যরকম অনুভূতি, অন্যরকম ভালো লাগা।
প্রতিযোগিতা শেষে সন্ধ্যায় আলোচনাসহ পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্যানেল চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা মির্জা সোলায়মান, ভৈরব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন, পৃষ্ঠপোষক এলিন ফুডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক, ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেছুর রহমান, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ প্রমুখ।
আলোচনা শেষে অতিথিরা চ্যাম্পিয়ন শফিউল্লাহকে ৫০ হাজার টাকা দামের একটি ফ্রিজ এবং প্রথম ও দ্বিতীয় রানার্স আপসহ প্রতি গ্রুপের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান লাভ করা মোট নয়জনের প্রত্যেককে ২০ ইঞ্চি এলইডি টেলিভিশন পুরস্কার দেওয়া হয়।