অটোর জন্য ভাতিজাকে গুম, বিলে মিলল কঙ্কাল
নরসিংদীতে হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘ সাত মাস পর মাদ্রাসাপড়ুয়া এক অটোচালকের মাথার খুলিসহ কঙ্কাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া একমাত্র আসামি কাউসার মিয়ার (২৪) স্বীকারোক্তি অনুযায়ী আজ শুক্রবার দুপুরে নরসিংদীর মদনগঞ্জের রেললাইনের ৫ নম্বর ব্রিজের দক্ষিণ পাশের বিল থেকে এসব উদ্ধার করা হয়।
নিহত ইকবাল হোসেন (১৭) কোতালিরচর হোসেন বাজারের জাকির হোসেনের ছেলে। সে পৌলানপুর ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। লেখাপড়ার খরচ চালানোর জন্য সে ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটো চালাত।
পুলিশ ও স্বজনরা জানায়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টার দিকে ইকবাল হোসেন আলগী মনোহরপুর শাহিন মিয়ার গ্যারেজ থেকে ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত অটো নিয়ে বের হয়। সেদিন তার মা-বাবাকে মোবাইলে বলে রাত ৮টার দিকে বাড়িতে ফিরবে। এর পর থেকে সে নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ১ মার্চ মাধবদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ইকবালের বড় ভাই।
পরে ইকবালের মোবাইল কললিস্টের সূত্র ধরে মাদবদী থানার পুলিশ গত ২০ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ শিলমান্দীর কাউসার মিয়া ও নজরুল খানকে গ্রেপ্তার করে। পরে রাতে মামলা হয়। পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর কাউসার ও নজরুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে নরসিংদীর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম চন্দন কান্তি নাথের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দিতে কাউসার জানান, নিহতের সৎচাচা ওমর ফারুক, নজরুল খান ও তিনি ইকবালকে গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। হত্যার পর লাশ মদনগঞ্জ ব্রিজের পাশের জমিতে পুঁতে রাখেন। তখন সেখানে পানি ছিল না। হত্যাকাণ্ডের পর ইকবালের ভাড়ায় নেওয়া ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাটি তাঁরা ৯০ হাজার টাকায় অন্যত্র বিক্রি করে দেন।
এর পর থেকে চাচা ওমর ফারুক গা ঢাকা দেন। সন্দেহভাজন হিসেবে প্রথমে কাউসার এবং পরে নজরুল খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তবে প্রধান আসামি ও পরিকল্পনাকারী নিহতের সৎচাচা কোতালিরচরের ওমর ফারুক এখনো পলাতক। দীর্ঘ সাত মাস পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আসামিদের চিহ্নিত করা স্থান বিলের পানির নিচ থেকে আজ শুক্রবার ইকবাল হোসেনের কঙ্কাল উদ্ধার করেছেন।
মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘আমরা মোবাইল কললিস্টের সূত্র ধরে প্রথমে পাঁচদোনা ভাটপাড়া থেকে কাউসারকে গ্রেপ্তার করি। এরপর নজরুল খানকে গ্রেপ্তার করি। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর আসামি কাউসার মিয়া আমাদের সামনে স্বীকার করেন, নিহতের সৎচাচা ওমর ফারুক, নাজমুল ও কাউসার তিনজন মিলে তাকে হত্যা করে মাটির নিচে পুঁতে রাখেন। দীর্ঘ সাত মাস পর আসামিদের চিহ্নিত স্থান থেকে আজ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন নিয়ে বিলের পানির নিচ থেকে নিহত ইকবালের মাথার খুলি ও হাড় উদ্ধার করি।’