মাদ্রাসা সুপার হত্যা মামলায় ছয় পুলিশ আসামি
সাতক্ষীরায় মাদ্রাসা সুপার সাঈদুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে ছয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তাঁর ভাই বজলুর রহমান।
আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) খুলনাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর আমলি আদালত ১-এ মামলাটি করেন বজলুর রহমান। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারি ইউনিয়নের কাথণ্ডা গ্রামের বাসিন্দা।
নিহত সাঈদুর রহমান (৪৮) কলারোয়া উপজেলার বাকশা হঠাৎগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ছিলেন।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাঈদুর রহমান। নিহতের পরিবারের দাবি, গত ১৪ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল সাঈদুরকে দুটি নাশকতার মামলায় বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় পুলিশ তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে।
মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর থানার এসআই আসাদুজ্জামান, এসআই পাইক দেলোয়ার হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শেখ সুমন হাসান, এএসআই আশরাফুজ্জামান ও পুলিশের অজ্ঞাতনামা দুই কনস্টেবলকে। তাঁরা সবাই সাতক্ষীরা সদর থানায় কর্মরত।
আদালতের বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদ মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) খুলনাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, মাদ্রাসা সুপার সাঈদুর রহমান গত ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার রাতের খাওয়া শেষে বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ২টার দিকে পুলিশের ওই সদস্যরা মোটরসাইকেলে তাঁর বাড়িতে যান। এ সময় তাঁরা তাঁকে ডাকাডাকি করে ঘরের বাইরে আসতে বলেন। কিন্তু সাঈদুর রহমান তাঁদের জানান, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা না দেখালে তিনি বাইরে আসবেন না। এ সময় পুলিশ সদস্যরা দরজায় সজোরে লাথি মারতে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে সাঈদুরের স্ত্রী সাজেদা খাতুন দরজা খুলে দেন। পুলিশ সাঈদুরকে হাতকড়া পরিয়ে গলা ধাক্কা দিয়ে বাইরে এনে উঠোনে ফেলে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি চাইলে এসআই আসাদুজ্জামান এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। তা দিতে অস্বীকার করায় ওই রাতেই তাঁরা তাঁকে নিয়ে যান সাতক্ষীরা থানায়। পরদিন সাঈদুরকে মুক্ত করতে থানায় আসেন স্বজনরা।
মামলায় বজলুর রহমান উল্লেখ করেন, ওই দিন দুপুরে থানার গারদখানায় রেখে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁকে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করা হয়। এতে তাঁর পায়ুপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। মারধরে নিস্তেজ হয়ে পড়ার পর সাঈদুর রহমানকে বিকেলে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। এ সময় সাঈদুর রহমান তাঁর স্বজনদের জানান, তাঁর দাঁড়ানো অথবা বসার ক্ষমতা নেই। সমস্ত শরীর ফুলে গেছে। পুলিশ তাঁর তলপেটের ওপর দাঁড়িয়ে চাপ দিয়েছে। এতে তাঁর বমি হচ্ছে।
মামলার বাদী তাঁর আরজিতে আরো উল্লেখ করেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় সাঈদুরকে সাতক্ষীরা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে প্রথমে কারা হাসপাতাল ও পরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। ভোরে হাসপাতালে তাঁকে দেখা যায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকতে। তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তাঁর পায়ুপথ দিয়ে রক্ত ঝরছিল। মারধরের কারণে সমস্ত শরীর ফুলে যায়। কিছু সময় পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান সাঈদুর মারা গেছেন।
মামলার বাদী বজলুর রহমান জানান, তাঁর ভাই সাঈদুর রহমান একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। এলাকায় একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন তিনি। বাদী বজলুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ আমার ভাইকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করেছে।’
মামলায় সাতজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এঁরা হলেন নিহতের স্ত্রী সাজেদা খাতুন, ভাই সফিকুল ইসলাম ও হাবুবুর রহমান, মুজাহিদ, সাইফুদ্দিন, মেহের আলী বিশ্বাস ও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা।
এদিকে মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে এসআই আসাদুজ্জামান বলেন, সাঈদুরকে মারধর করে হত্যার অভিযোগ সত্য নয়। সাঈদুরের কাছে ঘুষের টাকাও চাওয়া হয়নি। নাশকতার দুটি মামলায় সাঈদুরকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আদালতে মামলা হয়েছে শুনেছি। তবে কোনো কাগজপত্র হাতে পাইনি।’ একই কথা বলেন মামলার আরেক আসামি এএসআই শেখ সুমন হাসান।