রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে সারা দেশে মানববন্ধন
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা নাগরিকদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
আজ সোমবার দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সেসব খবর :
মো. আলমগীর হোসেন, ভালুকা : রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন, গণহত্যা বন্ধ ও তাঁদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়ে আজ দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভালুকায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সঞ্জীবন।
সংগঠনটির ভালুকা শাখার সভাপতি মো. হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসানের নেতৃত্বে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
শিহাব উদ্দিন বিপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : নির্যাতন-হত্যা বন্ধের পাশাপাশি বাংলাদেশের আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে আজ সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করে জেলা নাগরিক কমিটি।
কমিটির সভাপতি ডা. মো. বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হাবিবুল্লাহ, কবি জয়দুল হোসেনসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা।
মাহবুব হোসেন সারমাত, গোপালগঞ্জ : একই দাবিতে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এবং গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা।
রোহিঙ্গা মুসলমান হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে আজ সকাল ১০টা থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন বিক্ষোভকারীরা। বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মুফতি রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জেলার বিভিন্ন কওমি মাদ্রার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
বক্তরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন।
মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা : রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের দাবিতে মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্যিক ও আর্থিক অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর বর্বরতম নির্যাতন, গণহত্যা ও অং সান সু চির নোবেল পুরস্কার প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে উপাচার্য এই আহ্বান জানান।
উপাচার্য বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে যে বর্বর নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণহত্যার ঘটনা ঘটছে তা এ সভ্য পৃথিবীতে কল্পনাও করা যায় না। এটা মানবতার বিপর্যয়। বাংলাদেশের মানুষ একাত্তরের মতো আরেকটা গণহত্যা ও নির্যাতনের চিত্র দেখছে। বাংলাদেশের মানুষ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা মিয়ানমার সরকারের জঘন্যতম এ আচরণে ঘৃণা প্রকাশ করি, ধিক্কার জানাই।’
১৯১৯ সালের পর থেকে রাশিয়াকে বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের পাশে দেখা গেছে উল্লেখ করে ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বলেন, ‘একাত্তরেও আমরা তাদেরকে বাংলাদেশের পাশে পেয়েছি। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে, তাদের ভূমিকায় আমরা বিস্মিত। তাদের এ অবস্থানের জন্য আমরা নিন্দা জানাই। এই মানবতার সংকটে আমরা বিশ্ববিবেককে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।’
রোহিঙ্গারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়তে পারে, ফলে আইনশৃঙ্খলার ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এই আশ্রয় সাময়িক, এটা দীর্ঘদিন হতে পারে না। তাই অবশ্যই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বিশ্ববিবেককে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি মিয়ানমারের ওপর বাণিজ্যিক ও আর্থিক অবরোধ আরোপের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক সাধন রঞ্জন ঘোষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (চলতি দায়িত্ব) শেখ শারাফাত আলী, অফিসার্স কল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি তারিকুজ্জামান লিপন, সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম মোহাম্মদ আলী, কর্মচারীদের পক্ষে মোস্তফা আল মামুন প্রবাল। মানববন্ধনটি পরিচালনা করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দীপক চন্দ্র মণ্ডল। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাইফুল ইসলাম, রাবি সংবাদদাতা : বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’র ব্যানারে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যে পরিমাণে কষ্টের মধ্যে আছে আমরাও ১৯৭১ সালে এমনই কষ্টের মধ্যে ছিলাম। সে সময় আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। যারা শরণার্থী, অসহায়, মানবেতর জীবন-যাপন করছে আমরাও তাদের পাশে আছি। তাদের প্রতি সহানুভূতির আমাদের কোনো অভাব নেই। তবে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে এটা যেন সাময়িক হয় এবং এটার যেন একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়। যার মাধ্যমে তারা দেশে ফিরে যাবে।’
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চার লাখ রোহিঙ্গার ভার একা বহন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে উপ-উপাচার্য এই সংকট নিরসনে বিশ্বমানবতাকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক রকীব আহমদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ছাত্র-উপদেষ্টা অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস, শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ্ আজম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া একই ইস্যুতে সকাল ১০টার দিকে সিনেট ভবনের সামনে থেকে মৌনমিছিল বের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে আবার সিনেট ভবনের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে করে। এ ছাড়া বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে মানববন্ধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, সুনামগঞ্জ : ‘রোহিঙ্গারা মরবে কেন, রাখাইন রাজ্য শান্তি আনো’ এমন স্লোগানকে সামনে রেখে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর পাশবিক নির্যাতন, অমানবিক অত্যাচার, শিশুসহ নর-নারীদের বর্বরোচিত হত্যা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে সুনামগঞ্জের একটি স্কাউটস গ্রুপ।
সকালে শহরের আলফাত স্কয়ার পয়েন্টে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করে স্কাউট সংগঠন জাগরণী মুক্ত স্কাউট গ্রুপ।
জাগরণী মুক্ত স্কাউটস গ্রুপের প্রচার সম্পাদক মেহেদী হাসানের পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জ এইচএমপিবিএম কলেজের প্রভাষক শাহিনা চৌধুরী রুবি, জাগরণী মুক্ত স্কাউটস গ্রপের উপদেষ্টা মোশারফ হোসেন, জাগরণী মুক্ত স্কাউটস গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক এস এম রাজীব প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের হত্যাকাণ্ডের দায়ে অং সাং সু চির নোবেল ফিরিয়ে নিয়ে তাঁকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। সেই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানান।
রোহিঙ্গা নির্যাতন-গণহত্যার প্রতিবাদে পাবনায় মানববন্ধন ও সমাবেশ
ফয়জুল্লাহ ওয়াসিফ, শাবিপ্রবি সংবাদদাতা : দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংসতা ও গণহত্যা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি জানান। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
কর্মসূচীর সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বর্বরোচিত নৃশংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে যাতে করে সাধারণ এ জনগণকে আর হত্যার শিকার না হতে হয়। আমরা আশা করব মায়ানমার সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’
এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা : দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে উত্তরণ সাহিত্য আসর, পাঠশালা ও বিএনসিপি-পাবনা এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে হত্যা-নির্যাতন বন্ধসহ মিয়ানমার সরকারকে সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাবনা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সাবেক সম্পাদক এ বি এম ফজলুর রহমান, দৈনিক সিনসা সম্পাদক এস এম মাহবুব আলম, দৈনিক পাবনার খবর ও দি ডেইলি মর্নিং টাচ সম্পাদক এমজি বিপ্লব চৌধুরী, আলমগীর কবির হৃদয়, শিশির ইসলাম প্রমুখ।