জামিন পেলেই লাপাত্তা মাদকের আসামিরা
রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৩০টি ইয়াবা বড়িসহ আটক হন আলী আকবর। এক মাস পরই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। এর পর তিনি লাপাত্তা হয়ে যান। এখন ঢাকার মহানগর হাকিমের ১৯ নম্বর আদালতে তাঁর অনুপস্থিতেই চলছে বিচারকাজ।
এ বছরেরই মার্চে আমিনুল নামের এক আসামি এক কেজি গাঁজাসহ যাত্রাবাড়ী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়। আদালত তাঁকে এক মাসে পরে জামিন দেন। তিনি আদালত থেকে জামিন পেয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। তাঁর অনুপস্থিতে এখন ঢাকার মহানগর হাকিমের ৯ নম্বর আদালতে চলছে বিচারকাজ।
ওই দুজনের মতো বহু আসামিই মাদকের মামলায় জামিন পেয়ে হয়ে যাচ্ছেন লাপাত্তা। আবার জড়িয়ে পড়ছেন এক ধরনের অপরাধে।
এ ধরনের হাজারো আসামির বিচার হচ্ছে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম, মুখ্য বিচারিক হাকিম, জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ আদালতে। সে সব মামলার আসামিরা জামিন পেয়ে আর আদালতে হাজির হন না। এসব ক্ষেত্রে আসামিদের অনুপস্থিতিতে চলে বিচারকাজ।
আসামিদের জামিনের সময় জামিননামাতে জামিনদারের নাম ঠিকানা থাকলেও তা শুধু কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলেও নির্দিষ্ট ঠিকনায় না পাওয়াতে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারে না।
এ বিষয়ে ঢাকার ১৯ নম্বর মহানগর হাকিম আদালতের পেশকার পারভেজ সুমন এনটিভি অনলাইনকে জানান, মাদক মামলার বেশির ভাগ আসামি জামিন পেয়ে পলাতক হয়ে যান। আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তাঁদের ঠিকানায় পাওয়া যায় না। তাই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারে না। তাঁদের অনুপস্থিতে মামলার বিচারকাজ চালানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে আসামি পলাতক থাকায় বিচারকাজ বিলম্ব হয়।
ঢাকার ১৮ নম্বর মহানগর হাকিম আদালতের পেশকার জহুরুল হাসান জানান, মাদকের আসামিরা পলাতক থাকায় আদালত বেশির ভাগ সময় সাজা দিয়ে দেন। বর্তমানে ঢাকার আদালতে ইয়াবার মামলা বেশি। তিনি জানান, প্রতিদিনই সাত থেকে আটটি মাদকের মামলা বিচারের জন্য থাকে। তার মধ্যে দুই-একটিতে আসামিরা হাজির থাকেন, বাকি সব আসামি পলাতক।
ঢাকার নিম্ন আদালতের রেজিস্ট্রার ঘেঁটে দেখা যায়, প্রায় ৭০ হাজার মাদকের মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ৪০ হাজার মামলার আসামিই পলাতক।
এ বিষয়ে ফৌজদারি মামলার আইনজীবী ফারুক আহমেদ জানান, মাদকের মামলার বিচারকাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগে। তাই আসামিরা অনেক সময় ধৈর্যহারা হয়ে আর আদালতে আসেন না। এ ক্ষেত্রে আসামিরা আদালতে হাজির না হলে তাঁদের অনুপস্থিতে বিচারকাজ পরিচালনার বিধান রয়েছে। তিনি জানান, মাদকের মামলারগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হলে এ ধরনের ঘটনা কম ঘটবে। এ ছাড়া জামিনের সময় আসামিদের ভোটার আইডি কার্ড দিলে এ ধরনের ঘটনা কমে বলে।
ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আনোয়ারুল কবির বাবুল জানান, যেসব আসামি জামিন পান, তাঁরা পলাতক হলে যদি জামিনদারকে শোকজ করা হয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। এ ছাড়া মাদকের আসামিরা একই ধরনের অপরাধ বারবার করে বলে তাঁদের জামিন দেওয়ার বিষয়ে আদালত কঠোর হলে অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে। তিনি বলেন, মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েরা খারাপ পথে গিয়ে বিপথগামী হচ্ছে। এখনই কঠোর হতে হবে মাদকের মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে।