হত্যার পর গুমের মামলা, আড়াই বছর পর ফিরল সেই শিশু
নিখোঁজের আড়াই বছর পর মায়ের কাছ ফিরল পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার শিশু মতি ফকির (১৩)। বড় ভাই গালমন্দ করায় ২০১৫ সালে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় সে। এরপর মতি ফকিরের মা আদালতে হত্যার পর গুমের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেছিলেন।
মতি ফকির সাঁথিয়া উপজেলার কাবারীকোলা গ্রামের মৃত কালু ফকিরের ছেলে। এদিকে, কিশোর মতি ফিরে আসায় এই মামলার আসামিরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
পুলিশ জানায়, ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল বড় ভাই রবি ফকির সামান্য বিষয় নিয়ে মতি ফকিরকে গালমন্দ করেন। এ ঘটনার পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফেরিতে নগরবাড়ী-আরিচা পার হয়ে ঢাকায় যায় মতি। ছেলে নিখোঁজের পর ওই বছরের ২২ জুলাই মা শেফালী বেগম আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ছাতক বরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফুলচাঁদ মিয়াসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ওই শিক্ষকের স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
বাড়ি ফিরে কিশোর মতি ফকির জানায়, ঢাকায় গিয়ে খিলগাঁও থানা এলাকায় হাবু শেখ নামের একজনের সঙ্গে তার দেখা হয়। ওই ব্যক্তি তাকে দিয়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করাতেন। গত ১৩ সেপ্টেম্বর বুধবার ঢাকায় কাজ করতে করতে হঠাৎ চাচাতো ভাই মোতালেবের সঙ্গে দেখা হয় মতির। এরপর মোতালেব তাকে তাঁর বাসায় নিয়ে যান। সেখান থেকে শুক্রবার সন্ধ্যায় মতিকে নিয়ে পাবনার গ্রামের বাড়ি যান তিনি।
মতির মা শেফালী খাতুন বলেন, ‘আমার সন্তান ফিরে আসায় আমি অনেক খুশি। তাকে হারিয়ে আমি পথের পাগল হয়েছিলাম।’
এদিকে, নিখোঁজ হওয়া মতি ফকির ফিরে আসায় স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে শুরু করেছেন এ ঘটনায় করা মামলার আসামিরা।
এই মামলার প্রধান আসামি ছাতক বরাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফুলচাঁদ মিয়া জানান, তাঁকেসহ ছয়জনকে এ মামলার আসামি করা হয়েছে। মামলায় তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জেলহাজতেও পাঠানো হয়েছিল।
শিক্ষক ফুলচাঁদ অভিযোগ করে বলেন, ‘বাদীর ছেলের শ্বশুর (শেফালী খাতুনের বেয়াই) মানিক শেখ ও কাবারীকোলার বেলায়েত ষড়যন্ত্র করে আদালতে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করান। এ মামলায় দুই মাস জেলহাজতে থেকে জামিনে মুক্ত হই। আমি ষড়যন্ত্রকারীদের বিচার চাই।’
আড়াই বছর পর ফিরে আসা কিশোর মতিকে দেখতে এলাকাবাসী ও আত্মীয়-স্বজনরা তাদের বাড়িতে ভিড় করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমান আহমেদ ইনাম জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে এ ঘটনায় করা মামলার আসামিরা চাইলে এখন ২১১ ধারায় পাল্টা মামলা করতে পারেন।