জাজিরায় কাঠ ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট বাজারের উজ্জ্বল মোল্লা (৪০) নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত উজ্জ্বল মোল্লা পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার সুটিয়াকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দোকানের কর্মচারী রাকিবকে (১২) থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ। জাজিরা থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
কাজীরহাট বাজার কমিটির সদস্য নুরুল আমিন মাদবর ও জাজিরা থানার পুলিশ জানায়, নিহত উজ্জ্বল মোল্লা ২৫ ধরে কাজীরহাট বাজারে ভাণ্ডারী কাঠ বিতান নামে দোকান খুলে কাঠের ব্যবসা করে আসছিলেন। এ ছাড়া তিনি ভাণ্ডার শরিফের মুরিদ হওয়ার কারণে শরীয়তপুর জেলা ভাণ্ডার শরিফের মুরিদদের সভাপতি ছিলেন। ব্যবসার পাশাপাশি সংগঠনের কাজে উজ্জ্বলের কাছে একাধিক লোকজন আসতেন। তিনি সদালাপি ছিলেন। বেশ কিছুদিন আগে উজ্জ্বল মোল্লার স্ত্রী তাঁকে তালাক দিয়ে ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে তিনি তাঁর কাজীরহাটের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় তলায় কর্মচারী রাকিবকে নিয়ে থাকতেন।
পুলিশ জানায়, গতকাল রাতে উজ্জ্বল মোল্লা কর্মচারী রাকিবকে ডেকে বলেন, ‘আমার দুই বন্ধু আসবে, তুমি অন্য কোথাও ঘুমাও। রাকিব পাশের দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে ঘুমায়।’ তবে কে বা কারা বন্ধু তা সে বলতে পারছে না। সকালে রাকিব ঘুম থেকে উঠে দোকানের দরজা খোলা দেখে দ্বিতীয় তলায় যায়। উজ্জ্বল মোল্লার ঘরে তালা ঝুলানো দেখে রাকিব বাজারের ব্যবসায়ীদের জানায়। বাজারের ব্যবসায়ীরা এসে তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে উজ্জ্বল মোল্লার গলা কাটা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কর্মচারী রাকিবকে জাজিরা থানায় নিয়ে গেছে।
পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন ও পুলিশের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
দোকান কর্মচারী রাকিব হোসেন বলে, ‘গতকাল রাতে খাওয়াদাওয়া শেষে উজ্জ্বল আমাকে ডেকে বলেছেন আজ রাতে তার দুই বন্ধু তার সঙ্গে ঘুমাবে। আমাকে অন্যত্র ঘুমাতে বলেছে। আমি মনির মাদবরের ঘরে ঘুমাই। সকালে উঠে দেখি দোকানের দরজা খোলা। ওপরে গিয়ে দেখি তার ঘরের দরজায় তালা। আমি বাজার কমিটিকে জানানোর পর তারা তালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখে উজ্জ্বল মোল্লার গলা কাটা লাশ। আমি জানি না কারা তাঁর বন্ধু ছিল।’
নিহতের বাবা আফজাল মোল্লা বলেন, ‘আমার ছেলে উজ্জ্বলের দুই বন্ধু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার কাছে বেড়াতে আসে। তাদের বাড়ি বরিশালের বানারিপাড়ায়। আমি তাদের নাম জানি না। তারা রাতে ওর সঙ্গে ঘুমায়। সকালে ওদেরকে পাওয়া যায়নি। আমার ধারণা, ওরাই আমার ছেলেকে গলা কেটে খুন করেছে।’
কাজীরহাট বাজারের ইজারাদার মোকলেস মাদবর বলেন, উজ্জ্বল মোল্লার কাছে ভাণ্ডার শরিফের অসংখ্য মুরিদ ও ভক্ত আসত। ব্যবসায়িক বা সংগঠনের কারো সঙ্গে উজ্জ্বলের দ্বন্দ্ব ছিল না। কে বা কারা এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
জাজিরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাসির উদ্দিন শেখ বলেন, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দোকান কর্মচারীকে থানায় নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহত ব্যবসায়ীর দুই বন্ধুই তাকে খুন করে পালিয়েছে। এ ঘটনায় জাজিরা থানায় একটি হত্যা মামলার দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।