নওগাঁয় ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ
নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরদ্ধে অভিযোগ, ৬০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তিনি প্রায় ১১ একর খাসজমি ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ডভুক্ত করেছেন।
কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তি এলাকার ভূমিহীনদের পক্ষে গত ২৫ জুলাই ভূমি সচিব বরাবর এই লিখিত অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই বলে দাবি করেছেন আতাউর রহমান।
তবে নওগাঁর জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান জানান, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তদন্তের ফল অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে ভূমি আপিল বোর্ড (২-৫৫/৯৮ নম্বর মামলা) পোরশা উপজেলার নিতপুরের বাসিন্দা মৃত যমুনা প্রসাদ ভগদ নামের এক ব্যক্তির এক হাজার ১০০ বিঘা জমি খাস খতিয়ানভুক্ত ঘোষণা করে। এসব খাসজমি পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলা উপজেলার বিভিন্ন মৌজায় অবস্থিত।
পত্নীতলা উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মহেষপুর মৌজার আরএস ৬১৩ নম্বর খতিয়ানের ১০ একর ৭৪ শতক (৩২ বিঘা ৮ শতক) জমি স্থানীয় ভূমিহীন ২৬ জন ব্যক্তি লিজ নেওয়ার জন্য ২০০৫ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেন। লিজ না পেলেও ওই ভূমিহীন ব্যক্তিরা ২০০৫ সাল থেকে জমিগুলো ভোগদখল করে আসছিলেন।
অভিযোগ সূত্রে আরো জানা যায়, কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি পত্নীতলা উপজেলার মহেষপুর গ্রামের আশরাফ আলী ও আবদুস সালাম, তকিপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও আবদুল জব্বার, উষ্টি গ্রামের সুরেন কুমার এবং সাপাহার উপজেলার করলডাঙ্গা গ্রামের আবদুল কাদের ওই সব জমি তাঁদের রেকর্ডভুক্ত দাবি করে ভোগদখলকারী ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে দেন। কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রায় ৬০ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহণ করে ওই ১০ একর ৭৪ শতক ছয়জন ব্যক্তির নামে খারিজ করে দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘খাসজমি খতিয়ানভুক্ত জমি হওয়ায় ২০০৫ সালে জমিগুলো লিজ নেওয়ার জন্য আমরা এলাকার ২৬ জন ভূমিহীন মানুষ ইউএনওর কাছে আবেদন করি। জমিগুলো আমাদের নামে লিজ না দিলেও কিছু জমিতে আমরা চাষাবাদ করে আসছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছর রেকর্ডভুক্ত জমি বলে কয়েকজন স্থানীয় প্রভাবশালী লোক ওই সব জমি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করে দেয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ঘুষ নিয়ে ব্যক্তি মালিকের নামে ওই সব খাসজমি খারিজ করে দিয়েছেন।’
তবে এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং সরেজমিন তদন্ত করে ওই সব জমি বিভিন্ন ব্যক্তির নামে খারিজ করা হয়েছে। কোনো খাসজমি মালিকানায় রেকর্ডভুক্ত করা হইনি। আনীত অভিযোগের তদন্ত শেষেই প্রমাণিত হবে, আমি নিরপরাধ।’
আতাউর রহমান আরো বলেন, ‘অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলী শুধু আমার বিরুদ্ধে নয়, এর আগে অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছিলেন। তদন্ত শেষে ওই সব অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। অভিযোগ করাই উনার কাজ।’
বিষয়টি তদন্তাধীন উল্লেখ করে পত্নীতলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল করিম বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন খুব শিগগির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে।’