ছেলে হত্যার পর বাবার মৃত্যুর গুজব, ঘরবাড়িতে আগুন
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পাচক গ্রামে চাচাদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গতকাল বুধবার নজরুল ইসলাম মকদম (১৭) খুন হয়। ওই ঘটনায় আহত হয়ে নজরুলের বাবা নাসির উদ্দিন মকদম মারা গেছে গুজব ছড়িয়ে পড়লে প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে আগুন দেয় ক্ষুব্ধ জনতা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
নিহতের পরিবার, নড়িয়া থানা ও স্থানীয় ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নড়িয়ার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের পাচক গ্রামের নাসির উদ্দিন মকদম ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন। তাঁর স্ত্রী জ্যোতি বেগম ছেলে নজরুল ইসলাম মকদমকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। নাসির মকদমের সঙ্গে তাঁর বড় ভাই মহিউদ্দিন মকদম এবং চাচাতো ভাই আতিক মকদম ও মানিক মকদমদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। বাড়িতে থাকা গভীর নলকূপ থেকে পানি নিতে বাধা দিয়ে আসছিলেন মানিক ও আতিক। পানির ব্যবস্থা করতে গতকাল দুপুরে নলকূপ থেকে একটি সংযোগ লাইন নেওয়ার চেষ্টা করেন নাসির ও তাঁর ছেলে নজরুল। এই নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মহিউদ্দিন, আতিক, মানিক মিলে রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নাসির ও ছেলে নজরুলকে গুরুতর আহত করে। এ সময় নাসির মকদমের স্ত্রী জ্যোতি বেগমকেও পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে নজরুলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
স্থানীয়রা জানান, আজ সকালে নাসির মকদম সদর হাসপাতালে মারা গেছেন—এলাকায় এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ লোকজন নিহতের প্রতিপক্ষ আতিক মকদম, রনি মকদম ও মানিক মকদমের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার আগেই আতিক মকদমের ঘর পুড়ে যায়।
সংবাদ পেয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নড়িয়া সার্কেল) আবদুল হান্নান, নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ইসমাইল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে নিহত নজরুলের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বাদ এশা পাচক গ্রামের মাদবর বাড়ি জামে মসজিদ মাঠে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় গত দুই দিনে নড়িয়া থানায় কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আতিক মকদমের মা ফাতেমা বেগম, বোন শিরিন আক্তার ও মানিক মকদমের স্ত্রী মাকসুদা বেগমকে আটক করেছে।
ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আমির হোসেন শিকদার বলেন, ‘নিহত নজরুলের বাবা হাসপাতালে মারা গেছেন—এমন সংবাদ পেয়ে শরীয়তপুর হাসপাতালে চলে যাই। এরপর এলাকা থেকে সংবাদ পেয়েছি কে বা কারা ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে।’
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি ও দোষীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, টিউবঅয়েল থেকে পানির লাইন স্থাপনকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। ঘটনাস্থল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সকালে নাশতা খেতে যায়। এ সময় হঠাৎ করে নিহত নজরুলের বাবা হাসপাতালে মারা গেছেন—এমন গুজব ছড়িয়ে প্রতিপক্ষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে স্থানীয়রা।