কামারপাড়ায়ও ‘চীনের দেয়াল’
আর কদিন বাদেই পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতিবছর এই সময়টাতে কোরবানির পশু কেনার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যায় ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটির কেনাকাটাও। তবে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার কামারপাড়ায় এবার দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। অন্য ঈদের তুলনায় এবার ছুরি-চাপাতির বাজার ক্রেতাশূন্য বলে জানিয়েছেন কামারেরা।
মেশিনের তৈরি চীন ও থাইল্যান্ডের দা, বঁটি, ছুরির দাপটে বর্তমানে কামারপাড়ার ব্যস্ততা অনেকটাই কমে গেছে। তাই কামারশিল্পীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন কোরবানির ঈদের। তবে এবার দেশের বড় একটি অংশে বন্যা, হাওরাঞ্চলের ধান তলিয়ে যাওয়া ও লোহার দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আশানুরূপ ব্যস্ততা নেই কামারদের মধ্যে।
ভৈরব রানীরবাজার এলাকার নকুল চন্দ্র কর্মকার জানান, কোরবানির ঈদ সন্নিকটে। অন্য বছর এই সময়টায় কারো সঙ্গে কথা বলা তো অনেক পরের বিষয়, শ্বাস নেওয়ারও সময় থাকত না। কিন্তু এবার কাজ নেই। খরিদ্দার এলে সবার মধ্যে হাঁক পড়ে যায়। কে নেবেন তাঁর কাজটি।
একই এলাকার নিরঞ্জন কর্মকার জানান, প্রতিযোগিতা করে কাজ করে দিন শেষে খোরাকির টাকাও ওঠে না। তাঁদের তৈরি দা, বঁটি, চাপাতি, চাকুসহ অন্যান্য জিনিস মজবুত হওয়া সত্ত্বেও চাকচিক্যের কারণে ক্রেতারা মেশিনের তৈরি জিনিসের দিকে দিন দিন ঝুঁকছে। অপরদিকে এসব জিনিস তৈরির কাঁচামাল লোহা আর কয়লার দাম প্রতিবছরই বাড়ছে। এতে করে তৈরি জিনিসের দাম বেশি পড়ে। ওই দাম দিয়ে ক্রেতারা কিনতে চান না ছুরি-চাপাতি।
এদিকে কামারশিল্পের মালামাল বিক্রি করা হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছর বিক্রি কম থাকলেও কোরবানির ঈদকে উপলক্ষ করে তাঁদের বিক্রিও বেড়ে যায়। এবারও কিছুটা বেড়েছে। তবে এবারকার বিক্রি আশানুরূপ নয়।
ভৈরববাজার শাহি মসজিদ রোডের পুরোনো হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী রাকিব কাজী ছাদরুল আলম জানান, অন্য মৌসুমে এই সময় ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খান তাঁরা। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও ক্রেতাদের খুব একটা আনাগোনা চোখে পড়ে না। দোকানে বসে অলস সময় পার করছেন তাঁরা।
একই অভিমত চকবাজার এলাকার ফুটপাতের ব্যবসায়ী শ্যামল কর্মকার ও কাজী হার্ডওয়্যারের মালিক কাজী শফিউল্লাহর। তাঁরা জানান, কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, চীনা পণ্যের মূলত ক্রেতাশূন্যতার কারণ। তার ওপর এবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘার মতো যোগ হয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিশোরগঞ্জ-সুনামগঞ্জসহ বৃহত্তর এই ভাটি অঞ্চলের ফসলহানির কারণে এ অঞ্চলের কৃষক এবং কৃষিনির্ভর ব্যবসায়ীরা প্রায় নিঃস্ব। তাই ঈদের আমেজ নেই তাঁদের পরিবারে।
এদিকে, কোরবানির পশুর মাংস কাটার আরেকটি উপকরণ কাঠের গুঁড়ি তৈরির কাজ যাঁরা করেন, তাঁরাও জানালেন একই কথা। তাঁদের মধ্যেও আসেনি আগের মতো ব্যস্ততা। ভৈরব কাঠবাজারের গুঁড়ি ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ জানান, একশ থেকে আড়াইশ টাকা দরে প্রতি ঈদ মৌসুমে ৫০০ থেকে ৭০০ কাঠের গুঁড়ি বিক্রি করেন তিনি। কিন্তু ঈদ ঘনিয়ে এলেও এবারে ক্রেতাদের থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছেন না।