‘কেন আমার মেয়েকে এ ঘটনার শিকার হতে হলো?’
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন অভিযোগ করেছেন, অপহরণ ও হত্যার উদ্দেশ্যেই তাঁর মেয়ে মাইশা ওয়াজেদ প্রাপ্তির মুখে বিষাক্ত কিছু খাওয়ানো হয়।
খোকন বলেন, ‘কেন আমার মেয়েকে এ ঘটনার শিকার হতে হলো? কারা করলেন? এবং কী জন্য করলেন? আমি আশা করব সরকার-রাষ্ট্র এটা বের করে আমাকে দেবে। যেন সুষ্ঠু বিচারের মুখোমুখি করতে পারি।’
আজ বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে এসব কথা বলেন আইনজীবী ওয়াজেদ আলী খোকন। ওই বাড়িতে পুলিশের প্রহরা দেখা যায়।
গতকাল কোচিংয়ে ক্লাস করে ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা বিষাক্ত কিছু জোর করে প্রাপ্তির মুখে ঢুকিয়ে দেয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রাপ্তিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের একদিন পর ওই ঘটনা ঘটল। রায়ে সিটির সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র্যাবের সাবেক কর্মকর্তা লে. কর্নেল তারেক সাঈদসহ ১৫ জনের ফাঁসি বহাল রাখেন হাইকোর্ট।
‘মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা’
ওয়াজেদ আলী খোকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার নিরাপত্তাহীনতার কিছু না। প্রশাসন আমার ব্যাপারে যে সতর্কতা নিয়েছেন তাতে বোঝা যায় আমি নিরাপদ না। গতকাল রাতে ঢাকা থেকে আসার সময় তিন-চার থানার পুলিশ আমাকে কর্ডন দিয়েছে। হয়তো প্রশাসনের কাছে এমন কোনো বার্তা আছে।’
ওয়াজেদ আরো বলেন, ‘মানসিকভাবে আমাকে বিপর্যস্ত করার জন্য এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা আরো বড় হতে পারত। বড় করার জন্যই তারা গাড়ি ব্যবহার করেছে। অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এটা করা।’ তিনি বলেন, ‘প্রসিকিউটর হিসেবে যা মনে করি অপহরণ করার উদ্দেশ্যে বিষাক্ত নেশা জাতীয় পদার্থ খাইয়েছে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’
ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘ও চিনতে পারেনি। তবে চেহারার বর্ণনা দিতে পেরেছে। ওই লোকের পরনে স্যুট বুট ছিল। চশমা ছিল। একটু ফর্সা। বয়স ৪৮ থেকে ৫২। একটি সাদা গাড়িতে ওঠেন। ওই গাড়িতে আরো তিনজন ছিল। পরে গাড়িটি নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের দিকে যায়।’
‘কথার মাঝেই মিষ্টি দেয়’
ঘটনার শিকার ওয়াজেদ আলী খোকনের মেয়ে মাইশা ওয়াজেদ প্রাপ্তি জানান, বুধবার বিকেল পাঁচটায় নগরীর উকিলপাড়া মামার বাড়ি হাজি মঞ্জিলের চার তলা থেকে কোচিং শেষে নেমে আসলে এক তলার মাঝামাঝি পঞ্চাশোর্ধ এক লোক তার বাবার বন্ধু পরিচয় দিয়ে পথ আগলে দাঁড়ায়। নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য আরো অনেক কথা বলতে থাকে। পরে তাঁর বাবা সাত খুন মামলায় কৃতিত্বের দাবিদার বলে প্রাপ্তিকে মিষ্টি খাওয়াতে চায়। মিষ্টি খেতে অস্বীকার করলে একপর্যায়ে জোর করে ওর মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয়।
প্রাপ্তি বলেন, ‘এক লোক এসে বলল, আমাকে চিন। বললাম, না আপনাকে চিনি না। উনি বললেন, তিনি আমাদের বাসায় গেছেন। এরপর স্বজনদের কথা বলেন। তারপর একটা জিনিস দিয়ে বলে খাও। বললাম না খাব না। তারপর আবার অন্য কথাবার্তা বলা শুরু করে। পরে এমনভাবে জিনিসটি মুখে দেয় যে আমি গিলেই ফেলি। তাকে এড়িয়ে রিকশায় চলে আসি। পরে অসুস্থ লাগে। এ সময় আব্বুকে ফোন দেই। পরে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘ওই লোকের হাতে মিষ্টির বক্স ছিল। কথার মাঝখানে মুখে তা পুশ করে। ড্রাই সুইট ছিল। উনি এমনভাবে ঢুকিয়ে দেয় আমি গিলে ফেলি।’
‘তথ্য সংগ্রহ করছি’
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন পারভেজ বলেন, ‘আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ও নেতৃত্বে পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) সবাই তথ্য সংগ্রহ করছি। এখন আমরা কিছু বলতে পারছি না। তদন্তের স্বার্থে এখন কিছু বলছি না। অজ্ঞান করতে পারেনি। যদি হয়তো অপহরণ হতে পারত। এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। তবে এ ব্যাপারে কিছু বলব না তদন্তের স্বার্থে। এক বছর ধরে পুলিশ সুপার আছেন। দশ বছরে আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’