ঢাবির সিনেট অধিবেশনের বৈধতা, শুনানি ৩ অক্টোবর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নির্বাচনে তিন সদস্যের প্যানেল মনোনীত করতে সিনেটের বিশেষ সভা ডাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি মুলতবি করা হয়েছে। আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই শুনানি মুলতবি করেন হাইকোর্ট।
আজ বুধবার এ সংক্রান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু।
আজ শুনানিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু বলেন, সিনেট অধিবেশন কোরামপূর্ণ হলে অধিবেশন চালাতে বাধা নেই। কোরাম পূর্ণ করেই এ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ৪৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী বর্তমান নির্বাচন, আইন অনুযায়ী হয়েছে।
আব্দুল মতিন খসরু আরো বলেন, সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠানের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য উপস্থিত থাকতে হয়। এ অধিবেশনে তা ছিল। তিনি বলেন, সিনেট অধিবেশন হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। যে কোনো সময় এটি করা যায়।
এর জবাবে রিটকারীর আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সিনেট অধিবেশনের জন্য ৩১ ডিসেম্বর বলতে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বরকে বোঝানো হয়েছে। কেননা ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর সিনেটের প্রথম অধিবেশন হওয়ার পর থেকে তিন বছর শুরু হয়। আর তা গত শিক্ষাবর্ষে শেষ হয়। সিনেট অধিবেশন তিন বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
এই আইনজীবী বলেন, ২০১৬ -১০১৭ শিক্ষাবর্ষ অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করেই এ বছর করা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী তা সঠিক হয়নি।
আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সংসদ সদস্যরা শপথ গ্রহণ করে থাকেন। এর পরই কোরাম পূর্ণ হওয়ার ব্ষিয় থাকে। কিন্তু এখানে সঠিকভাবে নির্বাচনই হয়নি। ভিসি প্যানেলের কোরামও পূর্ণ হয়নি। সুতরাং বলা যায়, বিশেষ সিনেট অধিবেশনটি যথাযথ আইন অনুযায়ী হয়নি।
এ ছাড়া সিনেটে যেসব ক্যাটাগরি থেকে সদস্যদের অংশ নিতে হয় তার সবাই উপস্থিত ছিলেন না।
এ সময় ঢাবি কর্তৃপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে সব সিনেট অধিবেশনের একটি তালিকা আদালতে পেশ করেন। তিনি বলেন, ‘মাইলর্ড অনেক অধিবেশনে কোরামপূর্ণ ছাড়াই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শাসনামলে দেশ যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত তখনো কোরাম পূর্ণ ছিল। এখন সবকিছুই স্বাভাবিক হওয়ার পরও আপনারা পারছেন না কেন? মানুষ দিন দিন সামনে এগিয়ে যায়। আর আপনারা পিছনে যাচ্ছেন।’
এরপর আদালত আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত শুনানি মুলতবি ঘোষণা করেন।
আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দীন ও অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আজিজ। অন্যদিকে রিটকারীর পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার, অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান এবং সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম।
গত ৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য নির্বাচনের জন্য সিনেটের মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেলের পরবর্তী সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতি হলেন সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও মির্জা হোসাইন হায়দার।
উপাচার্য নির্বাচনের জন্য সিনেটের বিশেষ অধিবেশন ডাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি রিটের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে আদালত রিটটি চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তিরও আদেশ দিয়েছেন। এ সময় দায়িত্ব পালন করবেন বর্তমান উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
এর আগে গত ২৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, উপাচার্য নির্বাচনের জন্য প্যানেলের তিন সদস্য হলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং থিওরিটিক্যাল অ্যান্ড কম্পিউটেশনাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল আজিজ।
যে সিনেট অধিবেশনে এই উপাচার্য প্যানেল মনোনীত করা হয়, সেই সিনেটের বিশেষ অধিবেশন নিয়ে রিটটি করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট।
আদালতে রিট আবেদনটি দায়ের করেন বরিশালের আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুস সামাদ, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রাব্বানী, অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদ খান, অধ্যাপক ড. সিতেশ চন্দ্র বাচার, অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার, অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম, অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী, অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল আলম খান, এ কে এম আতিকুর রহমান, ফরিদপুরের ড. আবদুল জব্বার মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. হুয়ায়ন কবির।
রিটে আবেদনকারীরা জানান, গত ১৬ জুলাই ঢাবির রেজিস্ট্রার একটি চিঠি দেন সিনেট সভার জন্য। যাতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ আর ২১(২) ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে উপাচার্য ২৯ জুলাই বিকেল ৪টায় সিনেটের বিশেষ সভা আহ্বান করেছেন। উক্ত বিশেষ সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ১৯৭৩, ১১(১) ধারা অনুযায়ী চ্যান্সেলর কর্তৃক ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল মনোনয়ন করা হবে। ভাইস চ্যান্সেলরের প্যানেলে যাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব করা হবে, নাম প্রস্তাবকালে তাঁদের লিখিত সম্মতি সিনেট চেয়ারম্যানের কাছে পেশ করতে হবে। ওই সভায় উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।
এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই রিটটি করা হয়। গত ২০ জুলাই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি এম ফারুকের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ ২৯ জুলাই ডাকা সিনেটের বিশেষ অধিবেশনের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
আদালত রুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ১৯৭৩ সালে ২০ (১) ধারা অনুযায়ী সিনেট গঠন না করে ২৯ জুলাই ডাকা সভা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তা জানতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভিসি, প্রোভিসি (একাডেমিক), প্রোভিসি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা সচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এরপর গত ২৬ জুলাই হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছিলেন চেম্বার আদালত। এই আদেশের পর সিনেট অধিবেশন করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।