দুই স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণ, ভিডিও ফেসবুকে!
পাবনার সুজানগর উপজেলায় দুই স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও প্রকাশ করায় ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রী আজ রোববার বিকেলে মামলা করে।
পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. ইমরান হোসেন চৌধুরী মামলাটি গ্রহণ করে আসামিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আইনজীবী রাজিউল্লাহ সরদার রঞ্জু বলেন, ‘সুজানগর থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ না করায় রোববার মামলাটি আদালতে দায়ের করা হয়। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করায় আমরা ন্যায় বিচার পাব বলে আশা করছি।’
রাজিউল্লাহ সরদার মামলার আর্জির বিবরণ উল্লেখ করে জানান, ধর্ষণের শিকার অষ্টম শ্রেণির ওই দুই ছাত্রীর বাড়ি সুজানগর পৌর এলাকায়। গত ১ আগস্ট বিকেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছয় বখাটে চরভবনীপুর মাস্টারপাড়ার হযরত আলী, আল আমিন, শাহিন, মিঠুন, পাংকু ও সোহেল রানা অস্ত্র দেখিয়ে ওই দুই ছাত্রীকে পাশের নিকিরিপাড়ার একটি বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে বখাটেরা দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইল ফোনে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করে। ঘটনাটি কাউকে জানালে ধর্ষণের ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয় ধর্ষকরা। দুই ছাত্রী ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখে। ঘটনার কয়েক দিন পর ভিডিও চিত্র দেখিয়ে পুনরায় তাদের সঙ্গে যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। এরপর বখাটেরা ওই ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করলে মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই দুই ছাত্রীর অভিভাবকরা সুজানগর থানায় বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে তাঁদের ফিরিয়ে দেয় বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র আলহাজ আবদুল ওহাবের কাছে ওই দুই ছাত্রীর দরিদ্র বাবা-মা দাবি করলেও তিনি কৌশলে সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে সময়ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে বাধ্য হয়েই তাঁরা আদালতে মামলাটি করেন।
ধর্ষণের শিকার ওই দুই ছাত্রী জানায়, এই ঘটনার পর থেকে বখাটেদের হুমকির মুখে তারা বাড়ির বাইরে যেতে পারছে না এবং কাউকে মুখ দেখাতে পারছে না। সুষ্ঠু বিচার না পেলে তাদের আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।
এ বিষয়ে ওই দুই ছাত্রীর বাবা-মা জানান, তারা গরিব মানুষ। বখাটেরা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের পরিবারের সন্তান ও পৌর মেয়রের ক্যাডার। এ কারণে পুলিশ ও মেয়রের কাছ থেকে তাঁরা কোনো বিচার পাননি। এ ঘটনার পর থেকে তাঁরা সমাজে মুখ দেখাতে পারছেন না। আদালতের কাছে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।
সুজানগর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘বখাটেরা পৌর মেয়র আবদুল ওহাবের ক্যাডার হওয়ার কারণে পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেনি। আমরা কোর্টে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি তাঁদের। এই ঘটনার পর থেকেই ওই দুই ছাত্রী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।’ এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক বলেন, ‘এ ধরনের কোনো অভিযোগ কেউ আমাদের কাছে নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যোগাযোগ করা হলে সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবদুল ওয়াহাব গণধর্ষণের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মেয়ে দুটির অভিভাবকরা আমার কাছে এসেছিলেন। এটা নিয়ে কয়েক দফা সালিশ বৈঠকও হয়েছে, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।’
বখাটেরা তাঁর কর্মী-সমর্থকের বিষয়টি অস্বীকার করে মেয়র বলেন, ‘তারা আওয়ামী পরিবারের ছেলে হলেও তারা আমার লোক নয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’