ফরিদপুরে পদ্মায় ২১ বসতভিটা বিলীন
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বড় বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের মনোয়ারা। গত শনিবার তিনি মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। রাতে বাড়ি না ফেরায় তাঁর থাকার ঘরটি খালি পড়েছিল। ওই রাতেই তাঁর ঘরটি তলিয়ে যায় পদ্মা নদীতে।
মনোয়ারার ঘর ভাঙার শব্দে গভীর রাতে ঘুম ভাঙে তাঁর মা ছোট খাতুনের। তিনি উঠে দেখেন, মনোয়ারার ঘর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে ‘সর্বনাশা’ পদ্মা। তবে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ঘরের কিছু অংশ রক্ষা করেন সত্তরোর্ধ্ব মা।
ওই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে ছোট খাতুন বলেন, ‘রাইতে পানির হুসানিতে ঘুম ছুইড্যা গ্যাছে, উইডা দেহি মনোয়ারার ঘরের কোনা নাই।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাতে বড় বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের শেষ মাথায় প্রায় ৫০০ মিটার জায়গাজুড়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। গত দুদিনে জালাল খাঁ, ছোট রশিদ, উজ্জ্বল খাঁ, মনোয়ারা, ছোট খাতুন, জান খাঁ, রশিদ মোল্লা, ছকেল মোল্লা, হায়দার মোল্লার বাড়ি সরাতে হয়েছে। এ পর্যন্ত ২১টি বসতভিটা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে। ঝুঁকিতে আছে আরো ২৭টি বাড়ি। এ ছাড়া ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে মোল্লাডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফাজেল খাঁর ডাঙ্গী সরকারি প্রাইমারি স্কুলসহ বড় বালিয়াডাঙ্গী, ফাজেল খাঁর ডাঙ্গী, এম কে ডাঙ্গী গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার।
পদ্মার পাড় থেকে মাত্র ২২ গজ দূরে ঘর থাকায় তা সরাতে ব্যস্ত জান খা। তিনি বলেন, ‘মাথা গোঁজার এক মাত্র স্থানটুকু গাঙ্গে নিয়া যাইব, কোথায় জাইয়্যা দাঁড়ামু জানি না। রাস্তায় নিয়া ঘর কয়খান রাখতেছি। অনেকের কাছে থাকার জন্য সনকড়া (বছর চুক্তি) একটু জায়গা চাইছিলাম, কেউ দেয় নাই।’
চরভদ্রাসন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সগীর হোসেন গতকাল বিকেলে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সালাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানস বোস, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি মো. আনোয়ার আলী মোল্লা।
ইউএনও মো. সগীর হোসেন বলেন, ‘ভাঙনের ব্যাপারে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আশা করি, দ্রুত একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’