‘রায় নিয়ে উদ্বেগ থাকতে পারে, শঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে উদ্বেগ থাকতে পারে, কিন্তু শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এ ক্ষণিকের মেঘ কেটে যাবে।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর পলাশী মোড়ে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, রায়ের (ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়) পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছি, আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে। প্রধান বিচারপতিকে আমাদের দলের অবস্থান জানিয়েছি। আমি আজ আবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতিকেও সেই পর্যবেক্ষণের বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে যে বক্তব্য জানিয়েছি, সেটা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছি। এই নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আকাশের মেঘ ক্ষণিকের, সুর্য চিরদিনের। ক্ষণিকের মেঘ কাটিয়া যাবে, চির দিবসের সূর্য উঠিবে আবার।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন হয়েছে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা তাতে আস্থাশীল।’ তিনি আরো বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন এবং ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। এর চেয়ে তিস্তার পানি বণ্টন খুব বেশি সমস্যা নয়। আলাপ আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। তিস্তা নিয়ে আমাদের যে প্রাণের দাবি সমাধান ও চুক্তি সম্পাদন হবে। এই আশ্বাস আমি দিতে পারি। অচিরেই তিস্তা নদীর পানির বণ্টনের চুক্তি সম্পাদন হবে।’
‘একজন বাঙালি হিসেবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে’ দিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয়ের প্রতি ‘অনুরোধ’ জানান মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হিন্দুদেরকে বলছি, আপনারা মাথা উঁচু করে চলবেন। অসাম্প্রদায়িক এই বাংলাদেশে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা নিজেদের সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন মনে করবেন না। আপনারা এ দেশের ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন। এ দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের যে অধিকার, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবারই একই অধিকার।’ তিনি বলেন, ‘আপনারা নিজেদের মাইনরিটি ভাবেন কেন? মাথা উঁচু করে চলবেন। কার কাছে মাথানত করবেন। আপনার সমান অধিকার।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘আপনারা নিজেদের মাইনরিটি ভাবলে কিছু দুর্বৃত্ত আপনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। এ দুর্বৃত্তদের রুখে দাঁড়াতে শেখ হাসিনা সরকার আপনাদের সঙ্গে আছে।’ তিনি বলেন, ‘নীরবে চলে যাবেন না। কথা বলুন। কারা আপনাদের জমি-জমা, বাড়িঘর নিয়ে সংকীর্ণ চরিতার্থ করছে। এসব দুর্বৃত্তদের মোকাবেলায় এগিয়ে আসুন। ভয় করবেন না। ভয় করার কোন কারণ নেই। শেখ হাসিনা সরকার আপনাদের নিরাপত্তায় আছেন এবং থাকবেন।’ তিনি বলেন, ‘শুধু মুসলমান নয়, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। সেদিন মুক্তিযুদ্ধের জন্য কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্য রক্ত দিয়েছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মাঝখানে কিছু সময় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন হয়েছে। সম্পর্কে একটা মহল অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেয়াল তুলেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় আসার পর, বিশেষ করে বর্তমান ডাইনামিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতায় আসার পরে, সেই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দেয়াল আমরা ভেঙ্গে ফেলেছি।আর কোনো অবিশ্বাস নয়। অবিশ্বাস ও সন্দেহের বাতাবরণে দুই প্রতিবেশীর সহাবস্থান শান্তিপূর্ণ হয়নি। তাই আজকে সংশয়-সন্দেহের অবসান ঘটিয়েছি বলেই চুয়াত্তর সালের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির বাস্তবায়ন আমরা করতে পেরেছি।’
ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডি এল চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, সংসদ সদস্য হাজী সেলিম, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ।