টোল আদায়ে আইন ও নীতিমালা ভাঙার অভিযোগ
রাজধানীর প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে আইন ও নীতিমালা মেনে চলা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহনের কাছে টোল নিয়ে অনেক সময় রসিদ দেখা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া রসিদ দেওয়া হলেও তাতে তারিখ বা কারো সই থাকছে না।
টোল নীতিমালা, ২০১৪-এ বলা হয়েছে, ‘টোলঘর অতিক্রমকারী যানবাহনের শ্রেণি, সংখ্যা ও তারিখ উল্লেখ করে পাক্ষিক প্রতিবেদন ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ প্রধান প্রকৌশলী, সওজ অধিদপ্তরের নিকট দাখিল করবে। প্রতি তিন মাস অন্তর প্রধান প্রকৌশলী, সওজ অধিপ্তর এতদসংক্রান্ত একীভূত প্রতিবেদন পর্যালোচনাপূর্বক মতামতসহ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবেন।’
রসিদে তারিখ উল্লেখ থাকবে কি না, তা নীতিমালায় বলা নেই। তবে এখানে তারিখ না লিখলে ক্রয়কারী কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ ইজারদার ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রকৌশলীর কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে তারিখ উল্লেখ করে কীভাবে সে প্রশ্ন তৈরি হয়।
এ ছাড়া টোল আইন, ১৮৫১ (১৯৭৩ সালে সংশোধন করা হয়) অনুযায়ী, টোল দেওয়া ব্যক্তিকে রসিদ দেওয়ার বিধান নিয়ম রয়েছে।
প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। এখানকার নির্বাহী প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ বলেন, নতুন নীতিমালা আছে সেটা ওখানে বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কেউ টোল দিতে চায় না। বিশেষ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এখানে চার লেন সড়কের কাজ চলছে। বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। এই সড়ক টোলের আওতায় আসবে।
প্রথম বুড়িগঙ্গা সেতুতে টোল নেওয়ার পর রসিদ না দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন প্রকৌশলী মামুনুর রশিদ। তিনি জানান, টোল নিয়ে সবাইকে রসিদ দেওয়া হয়।
নীতিমালায় ইজারা
টোল নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা চুক্তির মেয়াদ হবে এক বছর। চলমান ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত চার মাস আগে নতুন ইজারাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু এবং এক মাস আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন বছর ধরে বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু ইজারা হয়নি। সওজের নিজস্ব জনবলেই এটা চলছে।
সওজের মুন্সীগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন, ‘যারা কাজ করছে, তারা আমাদের অধীনেই।’ রসিদে সই না থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, এত সই করা সম্ভব না। প্রতিটি রসিদ বইয়ে আমাদের সই আছে। তবে সব পাতায় সই করা সম্ভব না।’
প্রকৌশলী মনির আরো বলেন, আগামী ৭ আগস্ট ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করার কথা রয়েছে।
চালকদের বক্তব্য
টোল দিয়ে সেতু অতিক্রমকারী লেগুনাচালক মো. গাজী জানান, সেতু পার হওয়ার সময় তিনি ২০ টাকা টোল দিয়েছেন। ফেরার সময়ও ২০ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু তাঁকে কোনো রসিদ দেওয়া হয়নি।
এক বাসচালক বলেন, অনেক সময় শুধু টাকা নিয়েই টোল আদায়কারীরা চলে যান। ফলে একটা রসিদের জন্য বাস দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের পেছনে ছোটা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, খরচের টাকার হিসাব মেলানোর সময় মালিকরা টোল দেওয়ার রসিদের কপি দেখতে চান। কিন্তু দেখাতে না পারায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
কুরিয়ার সার্ভিসের এক গাড়িচালকও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, টোল দেওয়ার রসিদ দেখাতে না পারলে গাড়ির এবং পথের খরচের সঠিক হিসাব অফিস থেকে পান না তিনি।
এসব বিষয়ে কেরানীগঞ্জ সড়ক উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সৈয়দ আলম টেলিফোনে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঠিক আছে আমি দেখতাছি, স্বাক্ষর ছাড়া দিচ্ছে কেন। তারিখ অনেক সময় দেওয়া হয় না, আমরা কুলিয়ে উঠতে পারি না। দেখি আমি বিষয়টি দেখব।’
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেতু পার হতে বাসপ্রতি টোল দিতে হয় ৩০ টাকা। এ ছাড়া মিনিবাস, মাইক্রোবাস, কোস্টার, জিপ, কার ও পিকআপভ্যানের জন্য ধার্য ২০ টাকা করে।