পাঁচ মাসেও খোঁজ মেলেনি রাবি শিক্ষার্থী ফরহাদের
দীর্ঘ পাঁচ মাসেও খোঁজ মেলেনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিখোঁজ শিক্ষার্থী রুহুল কুদ্দুস মীর ফরহাদ আলীর।
ফরহাদের মা ফাহিমা খাতুন, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে নগরীর ডিঙ্গাডোবা মোড় থেকে র্যাব পরিচয়ে কয়েকজন ফরহাদকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর রাজপাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলেও প্রথমে তা নেয়নি পুলিশ। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ফরহাদের বাবা-মা। ঘটনার দুই মাস পর পুলিশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়।
ঘটনার পরদিন র্যাব সদস্যরা ফরহাদের বাড়িতে এসে তল্লাশি করে গেলেও তারা আর কোনো খোঁজ নেননি বলে জানান ফরহাদের মা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাব ৫-এর একজন কর্মকর্তা জানান, অনেক দিনের ঘটনা তো অনেকেই হয়তো এটা ভুলে গেছে। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরহাদ আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। নগরীর ভাটাপাড়া এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত তাঁর পরিবার। তাঁর বাবা মীর ফজলুল করিম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব সহকারী পদে চাকরি করতেন। বর্তমানে তাঁরা ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে চুয়াডাঙ্গা সদরের আলুপদিয়া মনিরামপাড়ায় নিজেদের বাড়িতে ফিরে গেছেন। সেখান থেকে রাজশাহী এসে নিয়মিত ছেলের খোঁজ নিলেও বারবার হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে ফরহাদের বাবা-মাকে।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টার দিকে ফরহাদ একটি পুরোনো মোটরসাইকেল নিয়ে ভাটাপাড়ার বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। মোটরসাইকেলটি ডিঙ্গাডোবা মোড়ের একটি গ্যারেজে রেখে তিনি ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরার জন্য মোড়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় র্যাব-৫ লেখা একটি মাইক্রোবাস সেখানে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে চার-পাঁচজন লোক নেমে ফরহাদকে জোর করে তাঁদের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। ঘটনার পরপরই স্থানীয় কয়েকজন লোক তাঁর বাড়িতে বিষয়টি জানায়। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে ফরহাদের খোঁজ নিতে থাকেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাননি।
রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘মাত্র এক সপ্তাহ হলো আমি এই থানায় যোগদান করেছি। এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শৃঙ্খলা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগের কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটলে আমরা শৃঙ্খলা কমিটি বিষয়টি তদারক করি। ফরহাদের বিষয়টি শোনার পর বিভাগের সভাপতিসহ আমরা র্যাব অফিসে খোঁজ নেই। তারা কিছু জানে না বলে জানায়।’ তিনি আরো বলেন, ‘ফরহাদের আচরণে সন্দেহের কিছুই ছিল না। ফরহাদ তাবলিগ জামায়াত করত, ধার্মিক ছিল। তবে বন্ধুদের সঙ্গে বেশ ঘোরাঘুরি করত। খুবই চঞ্চল স্বভাবের ছেলে। কখনো মনে হয়নি সে খারাপ কিছুর সঙ্গে জড়িত।’