আইফুকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন
জীবনের শুরু হওয়ার আগেই শুরু জীবনযুদ্ধ। সিনেমার গল্পকেও হার মানিয়ে অবিচল পথ চলছিল আইফু আহমদ। পথের শেষে যাওয়ার আগেই থেমে যায় তাঁর বর্ণিল স্বপ্ন। বন্ধ হয়ে সম্ভাবনার সব দুয়ার। ২৬ বছর বয়সী আইফু বর্তমানে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেজ অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর দুটি কিডনিই বিকল।
কর্তব্যরত চিকিৎসক অধ্যাপক আইয়ুব আলী চৌধুরীর ভাষ্য, তাঁর বর্তমানে সিরাম ক্রিয়েটেনিন ২৯.২। বলা যায়, তাঁর দুটো কিডনিই বিকল। সুস্থ থাকার জন্য দীর্ঘদিন ডায়ালাইসিস নিয়ে বাঁচতে হবে। যদি ডোনার থাকে সেই ক্ষেত্রে কিডনি অপসারণ। তবে এখন ডায়ালাইসিসই সুস্থ থাকার একমাত্র উপায়। এ জন্য প্রয়োজন বড় অঙ্কের টাকা। দীর্ঘমেয়াদি এই চিকিৎসার জন্য প্রায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন।
বর্তমানে তাঁর পরিবারের লোকসংখ্যা যাদের ভরণপোষণের দায়ভার ছিল আইফুর ওপর। কিন্তু আজ দুটি কিডনি বিকল হওয়ায় প্রায় নিরন্ন এই পরিবারের সদস্যরা। আইফুর চিকিৎসার প্রাথমিক খরচ তাঁর সহপাঠী, বন্ধু, স্বজন এবং মোহনগঞ্জ-বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ থানা ছাত্রলীগ বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে থেকে সাহায্য তুলে চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি এই চিকিৎসা চালানো কোনোভাবেই তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাই অনিশ্চতায় আছেন আইফু ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা।
আইফুর গায়ে এখন আর জোর নেই। যারপরনাই ক্লান্তি চেপে ধরেছে তাঁকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষণ পরপর তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। আর বলেন, ‘আহা রে আমি মরে গেলে আমাদের পরিবারের কী হবে! অনেক কষ্ট করে ছোট ভাইটাকে এইচএসসি পর্যন্ত পড়িয়েছিলাম। আমার এই অবস্থার জন্য তার পড়াও শেষ হয়ে গেল।’
কথাটা বলতেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। আত্মনির্ভরশীলতাই ছিল যাঁর স্বপ্ন, সে এখন পুরোপুরি পরনির্ভরশীল।
‘আমাকে বাঁচান, আমি বাঁচতে চাই। আমি আবার সুস্থ হয়ে একটা কিছু করতে চাই,’ বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে কাঁদেন আইফু।
আইফুর চিকিৎসার জন্য দেশের সব আর্থিক সচ্ছল মানুষের কাছে সহায়তার চেয়েছেন তাঁর শিক্ষিকা তাহমিনা সাত্তার। তিনি বলেন,‘আইফু একটা মহাকাব্যের নাম। সে কাব্যকে হারতে দিতে পারি না। আসুন আমরা ওর জন্য যে যার জায়গা থেকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেই।’
আইফুর জন্ম নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সোনাউল্লা চর গ্রামে। বাবা (মৃত) সজিদ আলী, মাতা (মৃত) জোবেদা খাতুন। পড়াশোনা শুরু সিংধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সফলতার সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর ভর্তি হন মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। ঠিক তখনই জীবনযুদ্ধ শুরু। সপ্তম শ্রেণিতে পা রাখার পর দরিদ্রতার কারণে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। আইফু জীবিকার তাগিদে চলে যান সিলেট। সেখানে কত কাজই না করেছেন তিনি। বিভিন্ন গ্যারেজে গাড়ি ধোয়া-মোছা, পলিথিন বিক্রি—এসবে নিজের জীবন চালিয়ে পরিবারের জন্য কিছু দিতে না পারায় দিনরাত রিকশা চালিয়েছেন। ফাঁকে ফাঁকে ছিল পড়ালেখাও। দিনরাত পরিশ্রম করে কিছু টাকা জমিয়ে মোহনগঞ্জ পাবলিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণি না পড়ে আইফু নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেন।
২০০৭ সালে মানবিক বিভাগ থেকে ৩.১৯ পেয়ে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পাস করেন। আবার সিলেট চলে যান। অনেক চেষ্টার পর গোবিন্দগঞ্জ আবদুল হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন, প্রাইভেট পড়িয়ে চালিয়ে যান পড়ালেখা।
২০০৯ সালে এইচএসসি পাস করে ইসলামের ইতিহাসে অনার্সে ভর্তি হয়ে আবার অর্থকষ্টে পড়েন আইফু। দ্বিতীয় বর্ষে উঠেই গার্মেন্টস, সোয়েটার, ওষুধ কোম্পানির চাকরিসহ বিভিন্ন কাজ করেন তিনি। এর মধ্যে আসে একের পর এক ট্র্যাজেডি ২০০৯-১০-এর মাঝামাঝি তাঁর বড় ভাই মারা যান। এই বড় ভাই-ই ছিলেন তাঁদের অভিভাবক।
এর ছয় মাস পর তৃতীয় ভাই মারা যান। তিনিও গার্মেন্টস শ্রমিক ছিলেন। এর ছয় মাস পর আরেক বড় ভাই। ২০১২ সালে মা, এর ছয় মাস পর বড় বোন মারা যান। এ যেন মৃত্যুর মিছিল। একের পর এক আপনজনের মৃত্যু স্তব্ধ করে দেয় আইফুকে। তবু এগোতে হবে। এই প্রত্যয় বুকে নিয়েই ২০১৬ সালে অনার্স পাস করে নেত্রকোনায় মাস্টার্সে ভর্তি হন তিনি। একটা প্রাইভেট স্কুলে চাকরি হয়। মোটামুটি ভালো অবস্থা আসে জীবনে এই প্রথম।
আইফুর পরিবারে এখন আছে জীবিত তিন ভাই। মৃত দুই ভাইয়ের বউ ও তাঁদের তিন সন্তান, দুজনের তিন বাচ্চা। আর মৃত বড় ভাইয়ের চার ছেলে। এক ভাই মুদি দোকান ছোট ভাইটা রাজমিস্ত্রি। কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে চলে এই পরিবারটি। ছোট ভাই অনন্ত ইসলাম এসএসসি পাস করে এইচএসসিতে পড়ছিল। কিন্তু তাকেও এখন কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে।
আইফুকে সহায়তা পাঠাতে পারেন-01768035349 (আইফু)
01753634313 বিকাশ এবং রকেট।