উঠে দাঁড়াতেই পারল না ‘রাজলক্ষ্মী’
ট্রাক থেকে নামানোর সময় পড়ে গিয়েছিল ৩৪ বছর বয়সী হাতি ‘রাজলক্ষ্মী’। এর পর এক সপ্তাহ ধরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। অবশেষে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে দেহাবসান হলো প্রাণীটির।
গত ১৪ জুলাই শ্রীমঙ্গলের উত্তর ভাড়াউড়া এলাকায় সড়কের পাশে ট্রাক থেকে নামানোর সময় পড়ে গিয়ে আহত হয় পোষা হাতি ‘রাজলক্ষ্মী’। এর পর থেকে ক্রমেই হাতিটির অবস্থার অবনতি হতে থাকে। উঠে দাঁড়াতে পারছিল না প্রাণীটি।
চিকিৎসকদের ধারণা, হাতিটির কোমর অথবা মেরুদণ্ডের হাড় স্থানচ্যুত হয়েছে। সাত দিন ধরে সে স্থানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি।
হাতিটির মালিক কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ কানাইদাসী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম। তিনি জানান, কয়েক মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ব্যক্তি সার্কাস ও বিয়ের অনুষ্ঠানে খেলা দেখানোর জন্য হাতিটি ভাড়া নেন। ১৪ জুলাই শুক্রবার রাতে হাতিটি ট্রাকে করে ফেরত দিতে আসেন ভাড়া নেওয়া ওই ব্যক্তি। শ্রীমঙ্গলে ট্রাক থেকে নামাতে গেলে হাতিটি পড়ে গিয়ে আহত হয়। এতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেজির হাতিটি আঘাত পায়।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, হাতিটিকে শ্রীমঙ্গল গরুর বাজার এলাকায় নামানোর কথা ছিল। তা না করে সদর ইউনিয়নের উত্তর ভাড়াউড়া এলাকায় এটিকে নামানো হয়। ভুল জায়গায় নামানোর কারণে হয়তো ট্রাক থেকে ছিটকে পড়ে সেটি আহত হয়েছে। তাঁর এলাকায় পাহাড়ের দিকে নিয়ে নামালে সমস্যা হতো না।
সিরাজুলের দাবি, সার্কাসের লোকজন পাহাড়ের দিকে হাতিটি নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাঁর ছোট ভাই আসার আগেই তাঁরা ট্রাক থেকে হাতিটি নামান। ছোট ভাই গিয়ে দেখে, হাতিটি মাটিতে পড়ে আছে। সার্কাসের লোকেরা বলেন, ‘সমস্যা নেই। পরে হাতিটা নিয়ে যান।’ তিনি আরো বলেন, পরের দিন সকালে হাতিটি নিতে গিয়ে দেখেন, এটির গায়ে শক্তি একেবারেই কমে গেছে। দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হেঁটেই পড়ে যায় হাতিটি। এর পর উঠতেই পারেনি এটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা হাতিটির পায়ে সুঁই ফুটিয়ে স্যালাইন দেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার রেঞ্জের বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দে, ভেটেরিনারি সার্জন নিরোদ চন্দ্র সরকার, শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন আরিফুল ইসলাম।
গত কয়েক দিন থেকে হাতিটি এক জায়গায় পড়ে থাকায় গর্ত হয়ে কাদায় পরিণত হয়। তাই অন্য একটি হাতি দিয়ে টেনে এটিকে অন্যত্র সরানো হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি হাতিটির চিকিৎসা করেছি। হাতিটির কোমর বা মেরুদণ্ডের হাড় স্থানচ্যুত হয়ে থাকতে পারে। সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানার প্রাণিবিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতোই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও হাতিটিকে বাঁচানো গেল না।’