‘কবে বিয়ে করব আর কবেই বা গড়ব সংসার!’
‘ভাই, বয়স তো পার হয়ে যাচ্ছে। কবে বিয়ে করব আর কবেই বা গড়ব সংসার! বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার পর পাঁচ বছর ধরে তো চাকরির পেছনেই ঘুরছি। সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি ২০১২ সালে। ২০১৫ সালে খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। সেই থেকে শুধু চাকরির পেছনেই দৌড়াচ্ছি। বয়স তো আর বসে থাকে না।’
আক্ষেপ আর রাজ্যের হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলেছেন ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ও খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত সুমন (ছদ্ম নাম)।
সুমনই শুধু এই পরিস্থিতির শিকার নন। তাঁর সঙ্গে আছেন আরো ৬৯ জন। এঁরা সবাই ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ও খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর পিএসসি ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭০ জনকে খাদ্য পরিদর্শক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে। খাদ্য মন্ত্রণালয় দীর্ঘ দুই বছর ধরে তাঁদের নিয়োগ আটকে রেখেছে।
৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ অপর ৯১২ জনকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এঁদের সবাইকে ২০১৫ সালেই নিয়োগ দেওয়া হয়। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ১৫০টি খাদ্য পরিদর্শকের পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও উত্তীর্ণ ৭০ জন নিয়োগ পাচ্ছেন না।
বিসিএস উত্তীর্ণ এ ৭০ কর্মকর্তা নিয়োগের আশা নিয়ে দুই বছর ধরে বিরামহীনভাবে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের এ দপ্তর থেকে সে দপ্তর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মন্ত্রণালয় থেকেও কোনো সদুত্তর পাচ্ছেন না তাঁরা।
নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে নিয়োগের জন্য বিদ্যমান বিধিটি ১৯৮৩ সালে সামরিক সরকারের আমলে করা। হাইকোর্ট সামরিক সরকারের আমলের সব বিধি ও আইন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করায় এটিও বাতিল হয়ে যায়। এখন নতুন বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে। নতুন বিধি না হওয়া পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তরে খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের এখতিয়ার আমাদের নেই। নতুন বিধি প্রণয়নের কাজ চলছে।
৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ও খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা একজন ছাত্র বলেন, ‘পিএসসি আমাদের নিয়োগের সুপারিশ করে ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট। আর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার কথা বলে নিয়োগবিধি বাতিল করা হয় তারও ৩৪ দিন পর। তাই এ বিধির কথা বলে নিয়োগ স্থগিত রাখা কোনো অবস্থায় বাস্তবসম্মত নয়। কেন না যখন সুপারিশ করা হয়েছিল তখন নিয়োগবিধি কার্যকর ছিল।’ তিনি বলেন, পিএসসি ২০১২ সালে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। সেই সময় থেকেই আমরা এ পদে চাকরির জন্য চেষ্টা করে আসছি। এই হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর পার হয়ে গেল, এখনো চাকরিতে যোগ দিতে পারিনি।’
একই পদে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত অপর এক কর্মকর্তা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা ৩৩তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্তভাবে চাকরির জন্য মনোনীত হয়েছি। পিএসসির বিধি অনুযায়ী আমাদের সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয়বার পিএসসির অধীনে অন্য কোনো চাকরির জন্য আবেদন করার সুযোগ নেই। তা ছাড়া আমাদের বয়সও শেষ হয়ে গেছে। এখন হতাশা ছাড়া আমাদের জীবনে আর কিছুই দেখছি না। ‘বাড়িতে আমার বৃদ্ধ মা-বাবা রয়েছেন। তাঁরা আশায় বুক বেঁধে বসে আছেন। চাকরিতে যোগ দেব এবং তাঁদের মুখে হাসি ফোটাব। এখন এটা শুধু স্বপ্নই নয়, কল্পনার মতোই মনে হচ্ছে।’
এদিকে, যে বিধিমালার অজুহাত দেখিয়ে ৭০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, সেই বিধিমালার অনুসরণ করেই গত ৩ জুলাই ৮৮ জন উপ-খাদ্য পরিদর্শকের চাকরি স্থায়ী করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বদরুল হাসান স্বাক্ষর করে ১৮৩ সালের বিধিমালার বরাত দিয়ে এ প্রজ্ঞাপন জারি করেন।
পিএসসির সুপারিশ পাওয়া এই ৭০ জন খাদ্য পরিদর্শকের চাকরিতে নিয়োগে বিলম্বিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে খাদ্যসচিব মো. কায়কোবাদ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘পিএসসির সুপারিশ আমরা মানতে বাধ্য। কিন্তু এখানে যে বিধিমালার আওতায় তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটা এখন আর কার্যকর নেই। নতুন বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। সচিব কমিটিতে এর খসড়া এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। শিগগির সচিব কমিটির বৈঠক হবে বলে আমরা আশা করছি।’
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার উপসচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম এ বিষয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তাঁদের নিয়োগ ঝুলে থাকায় আমরাও উদ্বিগ্ন। বিষয়টি আমাদের কাছেও খারাপ লাগছে। বিলম্ব হলেও পিএসসির সুপারিশ অনুযায়ী তাঁদের নিয়োগ হবেই। নতুন বিধিমালা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত যাতে এ বিধিমালা প্রণয়নের কাজ শেষ হয়।’
একটি বিধিমালা করতে দুই বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ফয়সাল ইমাম বলেন, বিধি প্রণয়নে একটু সময় লাগেই। এটি সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি কাজ। একই বিধিমালার আওতায় অন্যান্য কার্যক্রম চললে এঁদের নিয়োগ দিতে অসুবিধা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন বিধিমালা হলেই নতুনদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।