নওগাঁয় স্বামীর নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ মারা গেছেন
দীঘ আট মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর না ফেরার দেশে চলে গেলেন নওগাঁ শহরের হাট-নওগাঁ মহল্লার গৃহবধূ হাবিবা খাতুন। আজ মঙ্গলবার সকালে বাবার বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যরা এর ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
হাবিবার বাবা হাফিজুর রহমান জানান, গত বছরের ৩০ নভেম্বর নির্যাতনে আহত হওয়ার পর থেকে চিকিৎসা চলছিল হাবিবার। সেই দিন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুখে কোনো কথা বলতে পারেননি হাবিবা। কোমরের নিচে ও মাথার পেছনে বড় ক্ষত ছিল তাঁর। প্রতিদিনের খাবার নাকে নল দিয়ে দেওয়া হতো। তিনি বলেন, চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, শরীরের বাইরের অংশ ছাড়া খাদ্যনালিতে বড় ধরনের ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল হাবিবার। সোমবার রাত থেকেই আরো অসুস্থ হয়ে যান তিনি। একপর্যায়ে আজ মঙ্গলবার সকালে বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এদিকে, হাবিবার স্বামী হাট-নওগাঁ কালিতলা মহল্লার অভি, তাঁর বাবা সামসুজ্জোহা খান বিদ্যুৎ ও মা তাহমিনাতুল মাওলাকে আসামি করে নওগাঁ সদর মডেল থানায় নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা করেন বাবা হাফিজুর রহমান। মামলায় অভি ও তার বাবা সামসুজ্জোহা গ্রেপ্তার হলেও বাবা পরে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামিনে বের হন। আর মাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আনাম মোল্লা জানান, যেহেতু হাবিবার বিষয়টি নিয়ে মামলা আছে তাই ময়নাতদন্ত শেষে লঅশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেন, অসুস্থতার শুরুর দিকে হাবিবাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অসুস্থতাজনিত মেডিক্যাল সার্টিফিকেটের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বরাবর বলা হলে তা দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত আদালতের মাধ্যমে আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপর এখনো তা দিতে পারেনি তারা। এতে মামলার অগ্রগতিতে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অভির মা তাহমিনাতুলকে আটক করতে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
গত বছরের ২৩ আগস্ট নওগাঁ শহেরর হাট-নওগাঁ কালিতলা মহল্লার তামভি হাসান অভির সঙ্গে বিয়ে হয় হাবিবার। মাত্র ৬ মাসের মাথায় বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা আনতে বলেন অভি। কিন্তু গৃহশিক্ষক বাবা তা দিতে অপারগতা জানালে শুরু হয় নির্যাতন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩০ নভেম্বর হাবিবা মারা গেছেন বলে খবর দেওয়া হয় পরিবারকে। অচেতন হাবিবাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করালে জানানো হয় হাবিবা বেঁচে আছেন; তবে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মেরে থেঁতলিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেলে টানা ১৬ দিন রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, হাবিবার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু গরিব বাবার পক্ষে তা আর হয়ে উঠেনি।