বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জিরাফের ঘরে আরেক শাবক
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের আরেকটি জিরাফের শাবক হয়েছে। গত ১১ দিনের ব্যবধানে এ পার্কের দুটি জিরাফ মা হলো।
শাবকসহ জিরাফ দুটি সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এ পার্কে শাবকসহ ১০টি জিরাফ রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে কর্মরত ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার সরোয়ার হোসেন জানান, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চার দফায় দক্ষিণ অফ্রিকা থেকে ১২টি জিরাফ আনা হয়। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝিতে দুটি এবং গত ১৭ মে দুটিসহ মোট চারটি জিরাফ অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
সরোয়ার হোসেন জানান, গত ১৩ জুন জন্ম নেওয়া শাবকটি মাদি ও সর্বশেষ গত ২৪ জুন জন্ম নেওয়া শাবকটি পুরুষ। সন্তান জন্মের পর থেকে দুই মা সন্তানসহ আলাদা হয়ে চলাফেরা করছে। শাবকসহ মা জিরাফরা সুস্থ আছে। বাচ্চাগুলো কিছুক্ষণ পরপর মায়ের দুধ পান ও খেলা করছে। জিরাফের বাচ্চাদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারে অভ্যস্ত করা হচ্ছে।
সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে জন্ম নেওয়া শাবক দুটি এবং তাদের মায়ের সুস্থতার জন্য জিরাফ বেষ্টনি এলাকায় একজন ভেটেরিনারি চিকিৎসককে সার্বক্ষণিক নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের স্বাভাবিক খাবার গাজর, ছোলা, কলা, সবুজ ঘাস ও গমের ভূষি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন দেওয়া হচ্ছে।
বন্যপ্রাণী কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন জানান, প্রতিটি জিরাফের গড় আয়ু প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০ থেকে ২৫ বছর। আর বেষ্টনিযুক্ত পরিবেশে প্রায় ২৮ বছর। পূর্ণবয়স্ক জিরাফের গড় ওজন এক হাজার ৬০ থেকে দুই হাজার ৪০০ পাউন্ড। বাচ্চা জিরাফের গড় ওজন হয় ১০০-১১৫ পাউন্ড। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে জিরাফ পূর্ণতাপ্রাপ্ত এবং প্রজননক্ষম হয়। ১৪ থেকে ১৫ মাস গর্ভে রাখার পর সাধারণত একটি মা জিরাফ একটি বাচ্চার জন্ম দেয়। পূর্ণ বয়স্ক জিরাফের উচ্চতা ১৯ ফুট ও তাদের জিহ্বার দৈর্ঘ্য আরো দুই ফুট।
এই প্রাণী কর্মকর্তা বলেন, জিরাফ সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে পছন্দ করে। প্রজনন সময় একাধিক পুরুষ জিরাফ কোনো মাদি জিরাফের সঙ্গে মিলিত হতে গেলে পুরুষ জিরাফগুলো যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পরে বিজয়ী পুরুষ জিরাফই মাদি জিরাফের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সম্মতি পায়। একটি মাদি জিরাফের ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বাচ্চা প্রসবের ক্ষমতা থাকে।
যে কারণে সাফারি পার্কে দুই জিরাফের মৃত্যু
সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক সামসুল আজম জানান, গত ১৭ মে পার্কে দুটি জিরাফ মারা যাওয়ার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ক্লস্ট্রিডিয়াম ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল ডিজিজ ইনভেস্টিগেশন ল্যাবরেটরি ওই তথ্য জানিয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের চিকিৎসক নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বৃষ্টির মধ্যে ও আর্দ্র মাটিতে বেশি বংশবিস্তার করে। এরা তৃণভোজি প্রাণীদের বেশি আক্রমণ করে। এ জীবাণু আক্রমণের ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রাণীরা মারা যেতে পারে। সাপ, বেজি, পানি ইত্যাদির মাধ্যমে এ জীবাণু বিস্তার লাভ করতে পারে। তবে আগাম প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এদের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এদের নটরিয়াস ব্যাকটেরিয়া বলা হয়।