‘মুড়ি-চানাচুরই আমার ঈদের খাওয়া’
‘ভাই টাহা নাই, খাওন নাই, মুড়ি চানাচুরই আমার ঈদের খাওয়া। ফুটপাতে থাকি, ফুটপাতে ঘুমাই। বউ ছেড়ে চইল্যা গেছে। বাচ্চারা কেউ খোঁজ নেয় না। তাই ফুটপাতে ঈদের আনন্দ।’
আজ সোমবার ঈদের দিন বেলা ১১টা রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে বসে বসে মুড়ি-চানাচুর খেতে খেতে কথাগুলো বলেন নুজ্জাশ মিয়া (৬০)।
জামালপুরের বাসিন্দা নুজ্জাশ মিয়ার দাবি, সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া হওয়ার পর স্ত্রী তাঁর ভাতের সঙ্গে বিষ মিশেয়ে দেয়। ওই ভাত খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার পর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। পরে জেনেছেন স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে গেছে। এক বছর আগে ঢাকায় কমলাপুর রেলস্টেশনে এসেছেন। তখন থেকে এখানে বসবাস করছেন।
নুজ্জাশ বলেন, ‘এক বছর ভাত খাই না। রুটি কলা খাই। ভাত খাওয়াইয়া বউ মারতে চাইছিল। এরপর হোটেলে যতবার ভাত খাইতে গেছি ততবার দেহি ভাত খাইলে লাইক (ঘুমের ঘোর) ধরে। ঘুমে ধরে। ভাতের মধ্যে বিষক্রিয়া রয়েছে। তাই গত এক বছর ভাত খাই না। স্টেশনে থাকি। মাঝেমধ্যে পাইলে রুটি কলা খাই। গোসলের জন্য দরকার হলে রমনা পার্কে করি।’ ঈদের দিন কী খেয়েছেন জানতে চাইলে বললেন, ‘শুধু আজ কেউ কিছু দেয় নাই। শুধু চানাচুর মুড়ি খাইছি।’
এদিকে রাজধানীর গুলিস্তানের স্টেডিয়ামের ফুটপাতে গিয়ে দেখা যায়, গরু-মুরগির মাংসের তরকারি, ভাত, সেমাই বিক্রি করছেন মরিয়ম বেগম। মুরগি-ভাত ৫০ টাকা, গরু-ভাত ৭০ টাকা। সেমাই ২০ টাকা। ফুটপাতের ওপর বসে খাচ্ছেন রিকশাচালক আবু তাহের। তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছি না। বাড়ি যেতে পারছি না। তাই ফুটপাতের সেমাই খেয়ে ঈদের মিষ্টিমুখ করছি। কষ্ট হলেও কিছুটা আয়ের আশায় ঢাকা থাইক্যা গেছি।’
সিএনজি অটোরিকশাচালক রবিউল বলেন, ‘ভাই ঈদের দিন বাড়ি যেতে পারি নাই। তাই ঈদের খাওয়ার ফুটপাতে খেয়ে নিচ্ছি। পরিবারের জন্য কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কী করমু। ফুটপাতই একমাত্র ঈদের খাওয়ার ভরসা। তাই সেমাই আর ভাত খাচ্ছি।’
এ বিষয়ে ভাত বিক্রেতা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘অনেকে বাড়িতে যেতে পারে নাই। আমরা বাসা থেইকা রান্না কইরা নিয়ে আসি। রিকশাচালক ও অনেকে আমাদের এখানে কমদামে খাবার খাইতাছে। ঈদের দিন বইলা সেমাই রান্না করছি। ১০ টাকা বা ২০ টাকায় সেমাই বিক্রি করছি। আমার দোকানের কাস্টমার সবাই। আনন্দ করেই সবাই খাচ্ছে। দৈনিক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হয়।’
পাশের ফুটপাতের আরেকটি ভাতের দোকানে বসে ভাত খাচ্ছে রিকশাশ্রমিক বাবুল। তিনি বলেন, ‘ভাই ঈদের দিন তাই ২০ সেমাই খেয়ে ঈদে উদযাপন করছি। বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকলে ভালো মন্দ খাইতাম। বাড়ি যাইনি। তাই এখানে কমদামে খেয়ে নিচ্ছি। রাস্তাঘাট ফাঁকা। কিছু বেশি টাকা আয়ের আশায় ঢাকায় থেকে গেছি। বাড়ি যাওয়া হয় নাই।’