রাউধাকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে : বাবা
রাজশাহী ইসলামি ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আবারো অভিযোগ করেছেন তাঁর বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ।
আজ রোববার রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ডা. আতিফ দাবি করেন, তাঁর মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে ডা. আতিফ বলেন, ফ্যানে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করলে যেসব চিহ্ন চোখে মুখে ও শরীরের ফুটে ওঠে তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি রাউধার শরীরে। অন্যদিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করলে যেসব আলামত ফুটে ওঠে তার সবই ছিল শরীরে।
মোহাম্মদ আতিফ বলেন, তাঁর মেয়ে যে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন, তার কোনো প্রমাণই নেই। আদৌ তাঁর মেয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে ছিলেন কি না, সেটাও পরিষ্কার নয়। কারণ, একজনও দেখেনি যে তিনি ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর মৃত্যুর পর যে ছবি পাওয়া যায়, তা বিছানায় শোয়ানো অবস্থায়। ‘ছবি না থাকলে কীভাবে বাবা হিসেবে আমি বিশ্বাস করব যে আমার মেয়ে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে?’
আতিফ আরো বলেন, ‘আত্মহত্যা করলে স্যালিভা বেরিয়ে আসে। মূত্র বেরিয়ে আসে। হাত-পা ছড়ানো থাকে। কিন্তু রাউধার হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল। সাধারণত শ্বাসরোধ করা হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রাউধার গলায় হাতের আঙুলের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। তার গলায় যে দাগ রয়েছে তা সূতি কাপড়ের ওড়নার নয়। ফলে সূতি কাপড়ের যে ওড়না দিয়ে রাউধা গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, তা মিথ্যা।’
আতিফ সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন তুলেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে। তিনি বলেন, রাউধার গলায় যে চিহ্ন রয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে কিসের, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এক্স-রে এমনকি এমআরআই করা প্রয়োজন। কিন্তু তা করা হয়নি। এটা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের গাফিলতি এবং প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা।
ডা. আতিফ সংবাদ সম্মেলন থেকে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণ পুলিশ ও ডিবি পুলিশ তদন্তে গাফিলতি করেছে। তবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গুরুত্ব নিয়ে মামলার তদন্ত করছে। প্রকৃত ঘটনা বের করতে গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত না করতে রাউধার মায়ের অনুরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. আতিফ বলেন, ‘একজন মা হিসেবে আবেগ থেকে তিনি এ ধরনের কথা বলবেন, এটাই স্বাভাবিক। এটা তাঁর জন্য অনেক কষ্টের। একজন বাবা হিসেবেও আমি চাই না আমার মেয়ের দেহ আবার কবর থেকে তুলে কাটাছেঁড়া করা হোক। তবে তদন্তের স্বার্থে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করে যদি ভালো কোনো ফলাফল আসে, তদন্তে যদি কোনো সহযোগিতা দরকার হয়, তবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হতে পারে।’ তিনি দাবি করেন, ‘শুধু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনই একমাত্র অনুষঙ্গ নয়, রাউধা যে হত্যাকাণ্ডের শিকার, তার জন্য আরো অনেক আলামত আছে।’
সংবাদ সম্মেলন শেষে রাউধার বাবা একটি প্ল্যাকার্ড নিয়ে নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। এতে লেখা ছিল, ‘মেডিকেল শিক্ষার্থী ও মডেল রাউধা আতিফ হত্যার সঠিক তদন্ত চাই। রাউধা হত্যার ন্যায়বিচার চাই।’
গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তাঁর সহপাঠীরা রাউধার ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে ফেলে। গত ৩০ মার্চ রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তাঁর মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ মেডিকেল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আতিফের জন্ম ১৯৯৬ সালে ১৮ মে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণে আরো পাঁচ মডেলের সঙ্গে রাউধার ছবি প্রচ্ছদ প্রতিবেদন হিসেবে ছাপা হয়।