সহযোগিতা মিললে চিং আবার স্কুলে যাবে, মাঠে খেলবে
একটি সড়ক দুর্ঘটনা কেড়ে নিয়েছে ১২ বছরের শিশু চিং-এর সব স্বপ্ন। যে বয়সে তার খেলার মাঠে থাকার কথা, পড়াশোনা করার কথা সেই বয়সে ওর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। স্বাভাবিক জীবনে ফেরাটাই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। চিং-এর পুরো নাম চিং ক্য হ্লা মারমা।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির আলুটিলায় ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেপরোয়া ট্রাকের চাপায় মারা যায় আটজন। আর আহত হন নয়জন। আহতদের মধ্যে ছয়জন বাড়ি ফিরে গেলেও আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকার ধানমণ্ডিতে ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে শিশু চিং। অন্য দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাঁরা চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চিং খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার চোংড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। অভাবী সংসারে চিং-এর মূল আস্থার দুই মানুষ বাবা-মা কাজের সন্ধানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দেশের বাইরে থাকলেও খুব ভালো নেই চিংয়ের বাবা ও মা। আর্থিক অনটন এখনো লেগে আছে। বর্তমানে চিং তার নানি, মামার কাছে থেকে মানুষ হচ্ছে। বড় হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার সাধ ছিল তার।
চিংয়ের বর্তমান ঠিকানা ঢাকার ইবনে সিনার শংকর শাখার পঞ্চম তলার ৫০৩ নম্বর কেবিন। সে বর্তমানে সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে আছে।
চিকিৎসা চলছে চিংয়ের। তবে প্রয়োজন অনেক অর্থের। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আলুটিলায় হতাহতের জন্য গঠিত তহবিলে টাকা পাঠাচ্ছে মানুষ। ওই টাকায় চিংসহ আহত অন্যদের চিকিৎসা চলছে। তবে তা অপ্রতুল। শুধু চিংয়ের পুরোপুরি সুস্থ হতে প্রয়োজন ২০ লাখ টাকা।
দুর্ঘটনার পরই চিংকে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমানে তাকে ঢাকায় চিকিৎসা করানো হচ্ছে। আর পুরো সময়টা তার কাটছে শুয়ে। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছু তার বিছানায়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক মানুষ তাকে দেখতে আসে, খোঁজখবর নিতে আসে। চিং নির্বাক হয়ে কেবল তাকিয়ে থাকে। ওর বাম পায়ের পুরোটা ক্ষতিগ্রস্ত। এত বড় ঘটনার পরও চিং বলে, ‘কোনো কষ্ট নেই। কষ্ট শুধু শুয়ে থাকতে।’
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চিং-এর সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কথা হয়। সে জানায়, ‘আমি বাড়ি যেতে চাই। স্কুলে যেতে চাই। বন্ধুদের সাথে খেলতে চাই।’
চিংয়ের চাচা মং মারমা এবং মামা আবি মারমা ঘটনার পর থেকে চিংকে নিয়ে হাসপাতালে আছে। তাঁরা জানান, ‘চিং ক্য হ্লা’র যেভাবে চিকিৎসা চলছে এভাবে আমাদের পক্ষে চিকিৎসা চালানো কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না। এতদিনে আমরা চিংকেই হারাতাম। তহবিল কমিটির লোকজন টাকা তুলে তার চিকিৎসা করাচ্ছে বলে আমরা চিং-এর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছি।’
আলুটিলায় ট্রাকের চাপায় হতাহতের ঘটনার পরপরই খাগড়াছড়ির নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন করা হয় ‘আলুটিলায় দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা তহবিল সংগ্রহ কমিটি’। চিংসহ আলুটিলায় আহতদের চিকিৎসা খরচ এই তহবিল থেকে বহন করা হচ্ছে।
তহবিল সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চাই থো অং মারমা বলেন, ‘নিহত ও আহত সবার আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাঁদের পক্ষে চিকিৎসা খরচ বহন করা সম্ভব না। এত বড় ঘটনার পর মানবিক জায়গা থেকে আমরা সবাই একসঙ্গে মিলে আহতদের পাশে দাঁড়িয়েছি। দেশ, দেশের বাইরে থেকে সহযোগিতা পাঠানো হচ্ছে। তবে তা অপ্রতুল।’ তিনি সরকারসহ হৃদয়বানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।
যে কেউ সাহায্য করে চিংকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য সাহায্য করতে পারেন।
চিকিৎসা সহায়তা পাঠাতে যোগাযোগ করুন : ০১৫৫৬৭৭৩৮২৪, ০১৫৫০৬০৫১৯৪, ০১৫৫৬৭৭২৬৬৬ নম্বরগুলোতে। অথবা আর্থিক সহায়তা পাঠাতে পারেন বিকাশ-০১৮৩৯৮৪৯৩৬৫, ০১৮২৮৮৩৪৭৭২ (ব্যক্তিগত) নম্বরগুলোতে। অথবা ব্যাংক হিসাব নং-৫৪১২২০১০১২১৭৯, সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, খাগড়াছড়ি শাখার নম্বরে।