ছাত্রদলের সভায় পুলিশের বাধা, সংঘর্ষে আহত ২৫
নেত্রকোনায় কেন্দুয়া উপজেলায় ছাত্রদলের কর্মীসভায় পুলিশের লাঠিপেটা চালানোর পর সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৩ জন পুলিশ সদস্য, বাকিরা ছাত্রদলকর্মী। আজ শুক্রবার কেন্দুয়া পৌর সদরে আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের অভিযোগ, অনুমতি না নিয়েই ওই বিদ্যালয়ে সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল। বাধা দিতে গেলে পুলিশের ওপর চড়াও হয়। অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের নেতারা অভিযোগ করেছেন, নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবেই সংগঠনের নেতাকর্মীরা এসেছিলেন। আর এদের ওপর হামলা ও মারধর করে পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় আলীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ছাত্রদলের কর্মী সমাবেশ চলছিল। পুলিশ গিয়ে সমাবেশ করতে নিষেধ করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় একাধিক ছাত্রদল নেতাকর্মী আহত হন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পুলিশকে ঘেরাও করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন এলাকাটি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় সহকর্মীরা আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে আসে।
কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক দেবপ্রাণ রায় জানান, আহত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ছাদেমুল হক, এসআই সঞ্জয় সরকার, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আল আমীন, এএসআই আবুল বাশার, এএসআই আবদুল কাদের, এএসআই হেলাল আহম্মেদ, কনস্টেবল সুমন মিয়া, মিজানুর রহমান, জাকির হোসেন, সোহেল রানা, রফিকুল ইসলাম ও আবুল খায়েরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের চিকিৎসার ব্যাপারে জানতে চাইলে দেবপ্রাণ জানান, ‘আমাদের হাসপাতালে পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো আহত ব্যক্তি আসেনি।’
এ ব্যাপারে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদলের কোনো প্রোগ্রামের অনুমতি ছিল না। আমরা কিছুই জানি না। আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তার প্রয়োজনে পুলিশ গিয়ে তাদের নিষেধ করলে তারা পুলিশকে ঘেরাও করে মারধর শুরু করে। এতে আমাদের পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৩ জন মারাত্মক আহত হন। তার মধ্যে গুরুতর আহত ছয় পুলিশ সদস্যকে নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুতাসিমুল ইসলাম বলেন, ‘ছাত্রদলের কোনো প্রোগ্রাম হবে এমন কিছু আমরা জানি না। অবৈধভাবে লোক জড়ো হওয়ার কারণে পুলিশ নিষেধ করে। পরে তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ করে বেশ কয়েকজনকে মারাত্মক আহত করে।’
এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফরিদ হোসেন বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠকের অংশ হিসেবে আমরা বসেছিলাম। ছাত্রদলের কেন্দুয়া কমিটির উদ্যোগে ওই আয়োজন করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ এসে আমাদের বাধা দেয় আর একই সঙ্গে লাঠিপেটা করে। পরে উত্তেজিত হয়ে দলের নেতাকর্মী আর স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে প্রতিহত করে।’
ফরিদ হোসেন বলেন, ‘পুলিশের মারধরে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুবসহ ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন জেলা কমিটির নেতাকর্মী।’
কেন্দুয়া সার্কেল সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. সোহান সরকার জানান, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা চলছে। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহিৃত করে আটকের চেষ্টা চলছে।