এতদিন দিয়েছেন ‘পুরস্কার’, এবার পেলেন হাতকড়া!
ফরিদপুরে এবার মুঠোফোন প্রতারক চক্র বা ‘টোপপাখি’ দলের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল রোববার রাতে ভাঙ্গা উপজেলায় নিজেদের বাড়ি থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ভাঙ্গার মালিগ্রাম এলাকার মো. মামুন-অর-রশিদ ও কাউলিপাড়া এলাকার মো. মামুন চৌধুরীর স্ত্রী লতা বেগম (২৪)। তাঁদের কাছ থেকে মোট ১২টি মুঠোফোন সেট, বিভিন্ন মুঠোফোন অপারেটরের ৪৫টি সিম ও এক হাজার ৪০০ টাকা উদ্ধার করে র্যাব।
ফরিদপুরে র্যাব-৮, সিপিসি ২-এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে অজ্ঞাতনামা প্রতারকচক্র তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার সোনালী ব্যাংকের এনায়েতপুর শাখার ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলামকে ফোন করে ক্যাশ অফিসার গোপাল চন্দ্রের মিথ্যা পরিচয় দিয়ে একজন গ্রাহকের স্পট ক্যাশের গোপন নম্বর ও ভোটার আইডি নম্বর জেনে ভুয়া গ্রাহক সেজে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকা থেকে তুলে নেয়। পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জেনে খোঁজ-খবর নিলে ওই মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ পায়।
আবার গতকাল ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ৮টা ১৬ মিনিটে শফিকুল ইসলামকে একই চক্রের কয়েকজন লোক তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে ম্যাসেজে লিখে জানায় যে ‘আপনি গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার ৫৭০ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন’। এর কিছুক্ষণ পর প্রতারকচক্র ফোন দিয়ে বলে, ‘আপনি পুরস্কারের টাকাটি তুলতে এক হাজার টাকা আমাদের নম্বরে বিকাশ করেন।’ শফিকুল ইসলাম তাঁর কথায় রাজি না হলে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন ব্যক্তি একই কথা বলায় এবং একপর্যায়ে প্রতারক চক্রের একজন নারী সদস্যকে গ্রামীণফোনের সিনিয়র অফিসার সাজিয়ে পুরস্কার পাওয়ার ও বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে বলে।
র্যাব জানিয়েছে, ওই সব বিষয় নিয়ে ভুক্তভোগী শফিকুল ইসলাম সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির সূত্র ধরে ফরিদপুর র্যাব-৮, সিপিসি ২-এর ক্যাম্প কমান্ডার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রইছ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি চৌকস আভিযানিক দল এ ব্যাপারে অনুসন্ধানের জন্য মাঠে নামে। অনুসন্ধানের একপর্যায়ে র্যাব জানতে পারে, প্রতারক চক্রের এক সদস্য ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিপাড়ার মুটরা গ্রামে অবস্থান করছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের আভিযানিক দলটি গতকাল রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে কাউলিপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের নারী সদস্য লতা বেগমকে (২৪) আটক করে। তখন উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে লতা বেগমের ঘর তল্লাশি করে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নয়টি মুঠোফোন, বিভিন্ন অপারেটরের ৩৮টি সিম ও এক হাজার ৪০০ টাকা উদ্ধার করে। পরে র্যাব সদস্যরা আটক লতা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত সোয়া ১০টার দিকে ভাঙ্গা থানাধীন মালিগ্রাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্য মো. মামুন-অর-রশিদকে তাঁর বাড়ি থেকে আটক করে এবং তাঁর ঘর তল্লাশি করে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ও বিভিন্ন অপারেটরের সাতটি সিম উদ্ধার করে। পরে আটক দুজনের বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় মামলা করে র্যাব।
যোগাযোগ করা হলে র্যাব কর্মকর্তা মো. রইছ উদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে জানান, ১৩ ফেব্রুয়ারির ঘটনাটি ব্যাংক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম তাঁদের জানিয়েছিলেন। এরপর তাঁরা অনুসন্ধানে নামেন। ওই দিনও আটক লতা বেগম প্রতারণার জন্য শফিকুল ইসলামকে ফোন করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদে দুই আসামি র্যাবকে জানিয়েছেন, তাঁরা সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তাঁদের দলে আরো আট-দশজন সদস্য রয়েছে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সময়ে মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন লোকদের প্রলোভন দেখিয়ে প্ররোচিত করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন।
এর আগে মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতারণা করার অভিযোগে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সদরপুর উপজেলা থেকে রুবেল, জহিরুল ইসলাম ও টিপু কাজীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় তাদের ব্যবহৃত ছয়টি মুঠোফোন, একাধিক সিম ও প্রায় ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।