বয়স্ক ভাতা না নিয়েই চলে গেলেন রসমতি
বয়স্ক ভাতা না নিয়েই চলে গেলেন রসমতি। ১০০ বছর বয়সে বয়স্কভাতার কাগজ হাতে পেলেও ভাতার টাকা আর তোলা হলো না তাঁর।
বরগুনার সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বুড়ির চর গ্রামের একলা বুড়ি রসমতি। তিনকূলে তাঁর কেউ নেই। ৩০ বছর ধরে একচালা একটি টিনের খুঁপড়ি ঘরে একাকী থাকতেন তিনি। রান্না-খাওয়াও চলত নিজের হাতে। স্থানীয় শিশুরা তাঁকে ‘একলা বুড়ি’ বলেই চিনত।
সম্প্রতি রসমতিকে নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা. বশিরুল আলমের হস্তক্ষেপে রসমতিকে বয়স্কভাতার তালিকাভুক্ত করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। বয়স্কভাতার তালিকায় রসমতির নাম উঠলেও শেষ পর্যন্ত ভাতার টাকা আর তোলা হয়নি রসমতির।
আজ মঙ্গলবার সকালে ১০০ বছরেরও বেশি বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয় রসমতির। বেলা ৩টার দিকে স্থানীয় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় সম্পন্ন হয় তাঁর শেষকৃত্যানুষ্ঠান।
স্থানীয় অধিবাসী বিষ্ণু রানী জানান, রসমতির বয়স্কভাতার কাগজপত্র হলেও জন্মসনদ না থাকায় তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবার জন্ম সনদের জন্য বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) গিয়েও তা পাওয়া যায়নি। আজ মঙ্গলবার সকালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাঁর জন্ম সনদ আনার কথা ছিল।
বুড়িরচর ইউনিয়নের মৃত আদিত্য সমদ্দারের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জ্যেষ্ঠ রসমতি সমদ্দার। বেশ জমিজমা ছিল তাঁদের। অল্প বয়সে আদিত্য সমদ্দারের একমাত্র ছেলের মৃত্যু হলে তিনি নিজের শালা বিজিন্দ্র চন্দ্রকে বাড়িতে আনেন। এর পরই শুরু হয় যত বিপত্তি। কখনো ভুল বুঝিয়ে, কখনো গোপনে সহজ সরল উদার মনের ভগ্নিপতি আদিত্য সমদ্দারের সব জমি লিখিয়ে নেন বিজিন্দ্র চন্দ্র। এরপর একদিন আদিত্য সমদ্দারের মৃত্যু হলে একা হয়ে যান একমাত্র মেয়ে রসমতি সমদ্দার।
রসমতির স্বামী মণীন্দ্র চন্দ্র হাওলাদারের মৃত্যুর পর পরই একে একে মৃত্যু হয় রসমতির ছয় ছেলেমেয়ের পাঁচজনেরই। মায়ালক্ষ্মী নামের এক মেয়ে বেঁচে থাকলেও দারিদ্র্য আর দূরত্বের কারণে কখনই তিনি মা রসমতির খোঁজ নেননি। থাকেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়। স্থানীয় অধিবাসী সূত্রে আরো জানা গেছে, রসমতির ভাগের সব জমিই কৌশলে আত্মসাৎ করে স্থানীয় কয়েকটি পরিবার।
এ বিষয়ে বরগুনার জেলা প্রশাসক ড. মহা. বশিরুল আলম বলেন, তিনি বেশ কয়েকবার রসমতির বাড়ি গিয়েছিলেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদসহ বরগুনার সমাজসেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিনি রসমতির বয়স্ক ভাতাসহ সব রকমের সহযোগিতার ব্যবস্থাও করেছিলেন বলে জানান।