রাজশাহীতে র্যাবের অভিযানের পর ক্লিনিক ধর্মঘট
রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার দুটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত সোয়া সাত লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এর প্রতিবাদসহ আরো দুই দফা দাবি যোগ করে গতকাল দুপুরের পর থেকে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছে মালিকরা।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতা নিয়ে র্যাব সারা দেশের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তারা রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার আমানা হাসপাতাল ও রয়্যাল হাসপাতালে অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে সরকারি ওষুধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়া পরে। এ কারণে আমানা হাসপাতালকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা ও ম্যানেজার মোবারক হোসেনকে আটক এবং রয়্যাল হাসপাতালকে পৌনে চার লাখ টাকা জরিমানা ও ম্যানেজার কাজেম আলীকে আটক করা হয়েছে।
এই অভিযানের প্রতিবাদে দুপুরের পর থেকে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট শুরু করেছে রাজশাহীর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিকরা। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা ডাক্তার দেখাতে এবং প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করাতে পারেনি।
আমানা হাসপাতালে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা প্রসঙ্গে সুপারভাইজার শামীম হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা বিকেলে এখানে রোগী দেখেন এবং প্রয়োজনীয় অপারেশন করান। তারা যদি সঙ্গে করে সরকারি কোনো ওষুধ নিয়ে আসেন, তার দায়-দায়িত্ব তো আমানা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিতে পারে না। তাঁর দাবি, এই হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ কোনো সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। ধর্মঘট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির পক্ষ থেকে হাসপাতাল অনির্দিষ্টকালের যন্ত্র বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা হাসপাতালের গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। মালিক সমিতি আবার যখন হাসপাতাল চালু করতে বলবে, তখন থেকে হাসপাতাল চালু করা হবে।
শামীম হোসেন বলেন, ধর্মঘট শুরু হলেও হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে নতুন করে রোগী ভর্তি করা হবে না।
রাজশাহী বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাদত হোসেন জানান, র্যাবের অভিযানে করা জরিমানা অস্বাভাবিক। তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের এই অভিযানের কারণে নয়, তিন দফা দাবিতে মালিক সমিতির নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের জন্য বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দাবিগুলো হলো, অতিরিক্ত হোল্ডিং ট্যাক্স প্রত্যাহার, সাইনবোর্ড ফি প্রত্যাহার এবং যখন তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে অস্বাভাবিকহারে জরিমানা বন্ধ করা। তিনি বলেন, রাজশাহীর অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা প্রদান করা এখানকার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়।
এদিকে, সন্ধ্যায় রাজশাহী বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মালিক সমিতির জরুরি সভায় তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। সমিতির সহসভাপতি ড. ফয়সাল কবির চৌধুরী লিংকন জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সমিতির সভা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রশাসন তিন দফা দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ধর্মঘট চলবে। দাবিগুলো হলো- মঙ্গলবারের অভিযানকালে আমানা হাসপাতাল ও রয়্যাল হাসপাতাল থেকে আটক দুই র্কমচারীকে নিঃশর্ত মুক্তি, ১৯৮৩ সালের ক্লিনিক পরিচালনা আইন অনুযায়ী জরিমানা করা এবং রাজশাহী সিটি করপোরশেন আরোপতি অস্বাভাবিক ট্রেড লাইসন্সে ফি প্রত্যাহার ও সাইনর্বোড ফি বাতিল। তিনি বলনে, ১৯৮৩ সালের আইন অনুযায়ী ভ্রাম্যমাণ আদালত ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারেন। এই আইন থাকা সত্ত্বেও ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানকালে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করছেন। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।