সন্ত্রাসী ধরিয়ে দেওয়া লতিফের কাজ রাতদিন
রাতে মানুষ ঘুমিয়ে গেলে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। এক হাতে টর্চ অন্য হাতে লাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়ান পুরো এলাকা। মাঝে মাঝে ফুঁ দেন বাঁশিতে। রাতভর এলাকা পাহারা দিয়ে ভোরে কয়েক ঘণ্টার ঘুম। এরপর আবারও শুরু অন্যের বাড়িতে কর্মযজ্ঞ।
বলা হচ্ছে আবদুল লতিফ মল্লিকের (৬৪) কথা। তিনি রাজধানীর আগারগাঁও তালতলার দক্ষিণ পীরেরবাগে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। এলাকায় প্রতি রাতেই দিতে হয় পাহারা। নেই সাপ্তাহিক ছুটিও। অসুস্থ হলেও কাজে ফাঁকি দেন না তিনি।
আবদুল লতিফের বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার পাঁচলি গ্রামে। দুই ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে বাড়িতেই কৃষি কাজ করেন। ঢাকায় তিনি একাই থাকেন। স্ত্রীকে রেখেছেন গ্রামের বাড়িতে।
১৯৯৬ সাল থেকে ওই নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। বাসার মালিকরা এই কাজের জন্য প্রথমে মাসিক বেতন দিতেন এক হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু এখন তা বেড়ে হয়েছে ছয় হাজার টাকা।
আবদুল লতিফ বলছিলেন, রাতে এলাকা পাহারা দিয়ে ভোরে গিয়ে বাসায় ঘুমাই। ৩-৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে আবার অন্যের বাড়িতে কাজ। প্রতিদিন এভাবেই কাটাতে হয়। দিনে এই অতিরিক্ত কাজ করে পাওয়া টাকায় তাঁর খরচ চলে যায়। আর রাতে পাহারা দিয়ে পাওয়া বেতন পাঠিয়ে দেন গ্রামে স্ত্রীর কাছে।
নৈশপ্রহরী ও অন্যের বাড়িতে কাজ করে গ্রামের বাড়িতে কিছু জমি কিনেছেন। এভাবে কষ্টের টাকা জমিয়ে আরো কিছু জমি কেনার চেষ্টা করছেন। বাড়িতে একটা ছোট দালান ঘরও উঠিয়েছেন বলে জানালেন লতিফ।
বৃদ্ধ বয়সেও এত পরিশ্রম কেন করেন? উত্তরে বৃদ্ধ বলেন, বসে থাকলে শরীরে রোগবালাই ভর করে। তাই শক্তি যত দিন আছে কাজ করে যাব।
আবদুল লতিফ বলেন, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। ছেলেমেয়েকেও পঞ্চম শ্রেণি পাস করিয়েছি। কিন্তু আমি কিছু সম্পদ রেখে যেতে চাই। যাতে আমার নাতি-নাতনিরা বেশি লেখাপড়া করতে পারে। আমাদের মতো যেন ছোট কাজ তাদের করতে না হয়।’
কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লতিফ বলেন, ‘২০০৫ সালে এ অঞ্চলে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী ছিল টাইগার বাবু। তাকে ধরে দেওয়ার জন্য পুলিশ আমার সহযোগিতা চায়। আমি একদিন গোপনে সংবাদ দিয়ে রাতে তাদের ধরিয়ে দেই। পরে টাইগার বাবু বাহিনীর অন্য লোকরা আমাকে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। জানতে পেরে আমি বাগরহাটে চলে যাই। প্রায় এক বছর পরে দক্ষিণ পীরেরবাগ এলাকার বাসাবাড়ির মালিকরা আমাকে আবার কাজে যোগ দেওয়ার জন্য সংবাদ পাঠায়। আমাকে আশ্বাস দেয়, কোনো সমস্যা হবে না, আমরা সব ঠিক করে ফেলেছি। তাঁদের কথায় এসে আবারও রাতের পাহারা শুরু করি।’ তবে রাতের পাহারার কাজ করলে মাঝেমধ্যে কিছু ছোটখাটো সমস্যা তো হবেই- যোগ করেন তিনি।