মামলা আছে তো, ভয়ে গোয়েন্দাদের ঘরের কথা বলে
নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপির দেওয়া প্রস্তাব নিয়ে রাজনীতিতে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য অব্যাহত আছে।
এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের শুরু করা বক্তব্যকে ‘আত্মঘাতী’ উল্লেখ করে গতকালই বিএনপির মহাসচিব বলেছিলেন, ‘এ ধরনের আচরণ রাজনৈতিক ও জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। তারা ভাববে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির যোগসাজস আছে।’
এর জবাবে একদিন পরই আজ ওবায়দুল কাদের বললেন, ‘বিএনপির গোপন কথা জানতে কি আমাদের বঙ্গভবনের আশ্রয় নিতে হবে? বিএনপির গোপন কথা বলার জন্য বিএনপিই যথেষ্ট। যাদের নিয়ে সংলাপে গেলেন, তাদের সবাইকে মির্জা ফখরুল সাহেব বিশ্বাস করেন?’
‘(বিএনপির) অনেকের মামলা আছে তো। জেল-জুলুমের ভয়ে গোয়েন্দাদের কাছে ঘরের কথা বলে। এই সূত্র ধরে তো অনেকেই জানার কথা’, যোগ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
আজ সোমবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের স্মরণসভায় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যকে ‘স্ববিরোধী’ বলেও উল্লেখ করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘তিনি (মির্জা ফখরুল) রাষ্ট্রপতির কাছে বিএনপি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন একজন ব্যক্তির নাম উদ্ধৃতি করে। এটা বঙ্গভবনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের যোগসাজশে এর গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। আবার তিনি (মির্জা ফখরুল) বললেন কে এম হাসানের নাম আমরা পাঠাইনি। মানে হলো, ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না।’
‘আপনি একদিকে বলছেন, গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়েছে। আরেকদিকে বলছেন, নাম পাঠাননি। এটা আপনার স্ববিরোধী অবস্থান। তিনি যখন বলছেন নাম পাঠাননি, তাহলে গোপনীয়তা ভঙ্গের বিষয়টি কেন আসল?’
কাদের আরো বলেন, ‘আসলে তিনি (মির্জা ফখরুল ইসলাম) কথার ফাঁদে আটকে গেছেন। আবার আমাকে বলেন বক্তব্য প্রত্যাহার করতে।’
নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির শুরু করা আলোচনায় প্রথমেই আমন্ত্রণ পায় বিএনপি। গত ১৮ ডিসেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলটি রাষ্ট্রপতির কাছে এ বিষয়ে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে এবং আশা প্রকাশ করেন যে, রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেবেন।
এক মাসেরও কিছু সময় পর গতকাল রোববার সকালে গুলিস্তানে মমহানগর নাট্যমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে সার্চ কমিটিতে সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নাম প্রস্তাব করেছেন।… কোনটা নিরপেক্ষ, কোনটা পক্ষ সেটা আমরা ভালো করে জানি। আজিজ-মার্কা ইসি কে গঠন করেছিল? এম এ আজিজ কোন দলের লোক ছিল? সার্চ কমিটিতে প্রস্তাবিত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম হাসান কোন দলের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ছিল?’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এ বক্তব্যের জবাবে পরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ওবায়দুল কাদেরের ওই বক্তব্য আত্মঘাতী। এতে তাঁর দলের চরিত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কিত করলেন। আমরা বলি, কাদের সাহেব তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিজ দলের এবং রাষ্ট্রপতির অবস্থান পরিষ্কার করুন।… এ ধরনের আচরণ রাজনৈতিক ও জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। তারা ভাববে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির যোগসাজস আছে।’
এসবের জবাবে আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমি শুধু বলতে চেয়েছি আমাদের কোনো চয়েস নেই, কিন্তু বিএনপির ইতিহাস বলে সাংবিধানিক পদে সবসময়ই তাদের দলের লোক প্রয়োজন। তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম এ আজিজ তো বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আর কে এম হাসান বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক, তাঁকে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর জন্য বিচারপতিদের বয়স দুই বছর বাড়িয়েছেন। এত পেয়ারের লোক বেঁচে থাকতে তাদের (বিএনপি) চয়েজে থাকবে না, তা কেমন করে হয়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আগে নিজেরা নিজেদের উপর বিশ্বাস করুন। স্ববিরোধিতা পরিহার করে ইতিবাচক রাজনীতি করুন। রাষ্ট্রপতির কাছে আমাদের প্রত্যাশা হল, নির্বাচন কমিশন ও সার্চ কমিটিতে যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি থাকে। এটা সম্পূর্ণ রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।’
আজ পুরান ঢাকার হোসেনী দালানের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ সভায় আয়োজন করে। সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোজাফফর হোসেন পল্টু, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রমুখ।