দুই মাস পর স্ত্রীর লাশ উদ্ধার, যুবলীগ নেতা আটক
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পর এক যুবলীগ নেতার স্ত্রী সাবেক ইউপি সদস্যের গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয় একটি মসজিদের শৌচাগারের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজ বুধবার বিকেলে লেপ দিয়ে পেঁচানো হাত-পা বাঁধা লাশটি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ নিহতের স্বামী ওই যুবলীগ নেতাকে আটক করেছে। নিহতের নাম নাসিমা আক্তার (৩৬)। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. মাসুম আকন্দের স্ত্রী।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলম চাঁদ ও স্থানীয়রা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের সেনপাড়া গ্রামের সোবহানের পালিত মেয়ে নাসিমার সঙ্গে বেশ কয়েক বছর আগে প্রতিবেশী দুলাল মিয়ার বিয়ে হয়। এ সংসারে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নাসিমা নাগরী ইউনিয়নের ৭, ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পদে নির্বাচিত হন। স্বামী দুলালের ব্যবসায়িক অংশীদার স্থানীয় রাথুরা গ্রামের মাসুম আকন্দের সঙ্গে নাসিমার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে মাসুম ও নাসিমার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুই বছর আগে মাসুম নাসিমাকে বিয়ে করেন। গত ৮ নভেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত মাসুমের বাড়িতে পিঠা উৎসব হয়। এ রাতে তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাবস্থায় সাবেক ইউপি সদস্য নাসিমা নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।
নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পর আজ বুধবার দুপুরে স্থানীয় এক নারী শুকনো পাতা কুড়াতে গিয়ে রাথুরা দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকের কুয়ার ভেতরে লেপ দিয়ে পেঁচানো পচা-গলিত লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ বিকেলে ঢাকনা সরিয়ে ওই কুয়া থেকে লেপ দিয়ে পেঁচানো হাত-পা বাঁধা নাসিমার গলিত ও বিকৃত লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নিহতের দ্বিতীয় স্বামী মাসুম আকন্দকে আটক করেছে।
নিহতের স্বজনরা জানায়, নাসিমার স্বামী দুলাল ও তাঁর বন্ধু মাসুম আকন্দ জমির ব্যবসা করতেন। দুলালের পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় মাসুমের সঙ্গে তাঁর বিরোধ সৃষ্টি হয়। স্বামীর পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য নাসিমা মাসুমের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করেন। একপর্যায়ে মাসুম নাসিমাকে আগের স্বামীকে তালাক দিতে এবং তাঁকে বিয়ে করতে বাধ্য করান। দ্বিতীয় বিয়ের পর নাসিমা একাধিকবার পালিয়ে প্রথম স্বামীর কাছে ফিরে আসেন। কিন্তু প্রতিবারই মাসুম ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নাসিমাকে নিয়ে যান। ঘটনার রাতে মাসুম বন্ধুদের সহায়তায় নাসিমাকে হত্যা করে মসজিদের সেপটিক ট্যাংকে লাশ ফেলার সময় মসজিদের ইমাম দেখতে পান। এ সময় বিষয়টি গোপন রাখার হুমকি দিলে ভয়ে ওই রাতেই মসজিদের ইমাম পালিয়ে যান।
নাসিমার প্রথম স্বামী দুলাল মিয়া বলেন, ‘আমার অর্থ আত্মসাৎ করার জন্য নাগরী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মাসুম ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে ও মিথ্যা প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে আমার স্ত্রী দুই সন্তানের জননী নাসিমাকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করে। দ্বিতীয় বিয়ের পর নাসিমা কয়েকবার পুনরায় আমার বাড়ি চলে এলে মাসুম ও তাঁর লোকজন হুমকি দিয়ে নাসিমাকে পুনরায় তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। পরে নাসিমাকে হত্যা করে লাশ গুম করে এবং ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে বাড়ি থেকে নাসিমা পালিয়ে গেছে বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মাসুম এলাকায় প্রচার চালাচ্ছিল।’