বায়ান্নর স্মৃতি
‘সেটাই ছিল আমার প্রথম বক্তৃতা’
১৯৫২ সালে যখন ভাষা আন্দোলন হয়। তখন আমি আমাদের রামপুর গ্রাম থেকে আড়াই মাইল দূরে আশুজিয়া হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। একুশে ফ্রেরুয়ারির সেই খবর আমাদের স্কুলে যখন এসে পৌঁছাল। তখনই আমরা স্কুল থেকে সব ছাত্রকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। যেহেতু ক্লাস টেনে পড়ি কাজেই আমরা তখন স্কুলের নেতা। আমরা বেরিয়ে প্রথমেই আমাদের স্কুল থেকে মাইল খানেক দূরে একটা বাজার নাম বসুর বাজার সেখানে গেলাম। সেদিন হাটবার ছিল। বাজারে যে দিক দিয়ে মানুষ প্রবেশ করছে আমরা টিনের চোঙা নিয়ে সেখানে চলে গেলাম এবং সেই মুখের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে শুরু করলাম যে ঢাকায় ছাত্রদের হত্যা করা হয়েছে। কারণ ছাত্ররা বাংলা ভাষার দাবি করেছিল। আমরা মিছিল করে গিয়ে তাদের সেগুলো বললাম এবং আজকে যেন কেউ হাট না করে। হরতাল ঘোষণা দিলাম।
বাজারের সব মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের হরতালের ডাকে সাড়া দিল এবং সেখানে মিছিলের মধ্যে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ নুরুল আমিনের রক্ত চাই এই সব স্লোগান উঠল এবং গ্রামের মানুষ বলা শুরু করল যে, হ্যাঁ আমরা আমাদের সন্তানদের ঢাকায় পাঠাব লেখাপড়া করানোর জন্য তারা গুলি করে মারবে, আবার শুনতেছি ইলেকশন নাকি হবে। ভোট হবে। ভোটের সঙ্গে তাদের ঝাটা দিব। এ রকম করে সেদিন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হরতাল হয়ে গিয়েছিল এবং আমরা সেখান থেকে বের হয়ে এসে ছাত্র এবং জনতা নিয়ে সভা করলাম। আমার মনে আছে বলতে গেলে প্রকাশ্য জনসভায় সেটাই ছিল আমার প্রথম বক্তৃতা।
সেই বক্তৃতায় আমি (নিধু গুপ্ত) নিধু বাবুর একটি কবিতা ‘স্বদেশি ভাষা’, “নানান দেশে নানান ভাষা, বিনে স্বদেশি ভাষা মিটে কি আশা”, সেগুলোর উদ্ধৃতি দিয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলাম এবং আশপাশে যে কয়টা হাট ছিল প্রত্যেকটা হাটে আমরা হরতাল করেছিলাম। তখনই আমরা বেশ কিছু ছাত্র এবং সেখানে খান মোহাম্মদ আবদুল হাকিম বলে একজন ছিলেন জালাল খাঁর ছেলে তিনি আমাদের নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাঁর সাহায্য নিয়ে আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে বৈঠক করেছি এবং মানুষকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের কথা বুঝিয়েছি এবং গ্রামে কিছু দিনের মধ্যেই বেশ সাড়া পড়েছিল। এইটুকু হলো আমার বায়ান্নর স্মৃতি।